শেয়ারবাজারে টানা দুই কার্যদিবসে ব্যাপক দরপতন
মাসুদ মিয়া : আগের দিনের ধারাবাহিকতায় গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ব্যাপক দরপতনের মধ্যে দিয়ে শেয়ারবাজারে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে পাশাপাশি লেনদেনও সূচক কমেছে। এই নিয়ে দুই কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এদিকে বিএসইসি ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পর বৃহস্পতিবার বড় পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বিনিয়োগকাারীরা। বিনিয়োগকারীদের সেই আপত্তির কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিদ্ধান্ত কিছুটা পরিবর্তন করে গত শনিবার কোম্পানিগুলোর শেয়ার পতনের ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রোকার নির্ধারণ করে। এতেও শেষ রক্ষায় হয়নি। এদিকে বাজার সংশ্লিস্টরা বলেন, দরপতনকে অযৌক্তিক কারন নেই। তারা বলেছেন, পেনিক সেলের (আতঙ্কে বিক্রি) কারণে বাজারে টানা বড় দরতপন দেখা দিয়েছে। এই পেনিক সেলের পেছনের কারণ ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া এবং সরকার থেকে সর্বাত্মক লকডাউন দেয়ার ঘোষণা।
তারা বলছেন, বিএসইসি থেকে বারবার বলা হচ্ছে লকডাউনের মধ্যেও শেয়ারবাজারে লেনদেন চলবে। সুতরাং লকডাউন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা দেয়া আতঙ্ক অযৌক্তিক। আর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সেটাও যুক্তি সংগত না। বিনিয়োগকারীদের উচিত বেশি দামে কেনা শেয়ার কম দামে বিক্রি না করা। বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ না বাড়ালে শেয়ারবাজারে তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
এদিকে ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার আগে লকডাউনের মধ্যে টানা তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স প্রায় আড়াই’শ পয়েন্ট বেড়ে যায়। আর বাজার মূলধন বাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকার উপরে।
এ পরিস্থিতিতে গত বুধবার কমিশন সভা করে তালিকাভুক্ত ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ও শেয়ারবাজারের উন্নয়নে প্রাথমিকভাবে এই কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয়েছে বলে জানায় বিএসইসি।
বিএসইসির এই সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়। তবে বুধবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা।
এরপর বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজর খুলতেই ধস নামে। মাত্র দুই ঘণ্টার লেনদেনেই ডিএসই প্রধান সূচক ৮২ পয়েন্ট পড়ে যায়। আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি তুলেন।
এ পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া ৬৬ কোম্পানির বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এই ৬৬ কোম্পানির শেয়ার দাম একদিনে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ কমতে পারবে। বিপরীতে দাম বাড়তে পারবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ।
তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই সিদ্ধান্তও পতন আটকাতে পারেনি। গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরু হতেই একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দরপতন হতে থাকে। এতে ১৫ মিনিটেই ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৮৭ পয়েন্ট পড়ে যায়। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে পতনের ধারা
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৫২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৭৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বাজারটিতে দিনভর লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ২৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬৪টির। আর ৫২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মূল্য সূচকের পতনের সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও আগের দিনের তুলনায় কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৫৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৭৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনেদেন কমেছে ১৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রবির ২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিডি ফাইন্যান্স।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- পূরবী জেনারেল ইন্স্যরেন্স, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এশিয়া প্যাসেফিক ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স এবং বেক্সিমকো ফার্মা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৪৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৯টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।