আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ১
আশা অর্থনীতিবিদদের নতুন বছরে দেশ মহামারী মুক্ত হয়ে অর্থনীতির চাকা গতিশীল হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনায় সংক্রমণ রোধে গতবছরে বাংলা নববর্ষ ঘটা করে উৎযাপন হয়নি। আজও বাংলা নবর্ষের প্রথম দিন। প্রতিবছর দিনটিকে কেন্দ্র করে নানা কর্মসূচি হাতে নিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট এ বছরও গতবারের চিত্র। ফলে পহেলা বৈশাখ ১৪২৮ বুধবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সশরীরে কোনো মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হবে না। পহেলার বৈশাখকে কেন্দ্র করে যেসব উদ্যোক্তারা পণ্য তৈরি করে থাকে তারা এ বছরও ক্ষতিমুখে পরবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ (বিআইডিএস)-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের পণ্য তৈরি হয়। এটাই আমাদের ইতিহাস। এ দিনকে ঘিরে গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পাড়া মহল্লায় বসে মেলা। প্রতিবছর এই মেলাকে ঘিরে এ মেলাকে কেন্দ্র করে বড় একটি অর্থনীতি জড়িত রয়েছে। গত বছরও আমরা পহেলা বৈশাখ পালন করতে পারিনি। এ বছরও হচ্ছে না। বর্তমানে করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়তে তাতে জীবন বাঁচাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, এ মেলাকে ঘিরে নানা ধরনের সেবা দেখতে পাওয়া যায়। যা গ্রামীণ অর্থনীতিসহ শহুরের অর্থনীতিতেও বড় অবদান রাখে। পহেলা বৈশাখের মেলায় বিদেশে পণ্যের চেয়ে দেশিও পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন কুটির শিল্পের পণ্যগুলোয় ভরে যায় এসব মেলা। এ উৎসককে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তরা তাদের পণ্য তৈরি করে থাকেন। তারা তাকিয়ে থাকেন এ মেলার দিকে। গতবছর আমরা দেখেছি, এ মেলাকে কেন্দ্র করে যারা পণ্য তৈরি করেছেন তারা বেশ ক্ষতিমুখে পড়েছিলো। কারণ করোনা সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী লকডাউন চলছিলো। ফলে পহেলা বৈশাখ উৎযাপন করা যায়নি। এ বছরও এক অবস্থা দেখতেছি। গতবছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে উদ্যোক্তারা যখন নতুন উদ্যোমে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে আবার করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। ফলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন বন্ধ থাকবে। এতে করে আবারও ক্ষতিমুখে পড়লো পহেলা বৈশাখকেন্দ্রিক পণ্য তৈরি করার উদ্যোক্তারা। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, পহেলা বৈশাখ আমরা উদযাপন করতে পাচ্ছি না। আশা করবো বাংলা নববর্ষে দেশ থেকে করোনা দূর হবে।
গত বছর করোনার সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ আরোপ করায় রপ্তানি খাতসহ অন্যান্যখাতে প্রভাব পরে। সংক্রমণ কমতে শুরু করলে পরবর্তিতে আস্তে আস্তে রপ্তানি খাত ইতিবাচক ধারায় আসতে শুরু করে। যদিও করোনার শুরু থেকেই দেশের রেমিটেন্সখাতে আয় বাড়তে থাকে। যা এখনও চলমান রয়েছে। তবে আবার করোনার সংক্রমণ বাড়ায় কঠোর বিনিষেধ আরোপ করায় আবারও প্রভাব পড়ার সঙ্কায় দেশের অর্থনীতি। যদি চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পরে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনায় ৮৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পোষাতে ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ব্যয় করতে হচ্ছে ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ করোনার আর্থিক ক্ষতির চেয়ে গত অর্থবছরে বেশি পরিমাণ দেয়া হয় প্রণোদনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মোকাবেলায় বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা দ্রুত বাস্তবায়নের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জগুলোও মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়েছে। এমনি অবস্থায় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন প্রাদুর্ভাব ও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও