ট্রাকে ধীরগতিতে পণ্য বিক্রির অভিযোগ টিসিবির পণ্য দোকানেও বিক্রির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
মো. আখতারুজ্জামান : রমজান ও কঠোর বিধিনিষেধকে ঘিরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে দাম বাড়াতে না পারে সেই লক্ষ্যে প্রতিবছরের ন্যায় ন্যায্যমূলে পণ্য বিক্রি করছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক সেল। সাধারণ মানুষের ভরসা এখন এই টিসিবির পণ্যে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো লোকদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টিসিবি ট্রাকের পাশাপাশি দোকানের মাধ্যমে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারে। এতে করে মানুষের দীর্ঘ লাইন কমে যাবে। কমে যাবে করোনা সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকিও।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ জানান, টিসিবি তাদের পুরানো দিনের পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। তারা ট্রাকের পাশাপাশি গুরুত্বপূণ্য স্থানে দোকানের মাধ্যমে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারে। দোকানে পণ্য রেখে দিনব্যাপী বিক্রি করতে পারে। সেখানেও লাইনের দাঁড়িয়ে পণ্য নিতে হবে। তবে সেখানে দিনব্যাপী বিক্রি হলে লাইনে দাঁড়ানো লোকের উপস্থিতি কমবে। টিসিবি ট্রাকের মাধ্যমে সাময়িক সময়ের জন্য এটা করে থাকে। এসব তো হয় ডিলাররের মাধ্যমে করে থাকে। এমন লোকদেরকে ডিলার নিয়োগ দেয়া উচিৎ যাদের দোকানের ব্যবস্থা রয়েছে। এমন হলে ট্রাকের পাশাপাশি তারা দোকানে পণ্য বিক্রি করতে পারে।
তিনি বলেন, এইভাবে ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য নেয়া সব শ্রেণির লোকদের জন্য সম্ভব হয় না। অনেকে প্রয়োজন থাকলেও সামাজিকতার কথা ভেবে লাইনে দাঁড়াতে চায় না বা পারে না। আর বর্তমানে করোনা সংক্রমণের বিষয়টা এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য নেয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। দেখা যায়, পণ্য নিতে আসার লোকাজন গা ঘেসে দাঁড়ার পাশাপাশি মুখে মাস্ক না পড়ারও প্রবণতা রয়েছে। এসব কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিতে পারে টিসিবি। যাতে করে পণ্য নিতে আসা লোকজন শারীরিক দূরত্বের পাশাপাশি মাস্ক পড়ার বিষয়ে সচেতন বা বাদ্ধ করা যায়।
অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ জানান, অনেক আগে টিসিবি দোকানের মাধ্যমে তাদের পণ্য বিক্রি করেছিল। এটা ভালো ফলও দিয়েছিলো। আমরা দেখেছি ট্রাকের সামনে সব শ্রেণির লোকজন লজ্জায় দাঁড়াতে পারে না। এই শ্রেণিটা হলো মধ্যবিত্ত। এদের কথা চিন্তা করে হলেও দোকানে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা উচিৎ। এটা করলে দীর্ঘ লাইন কমে যাবে। তবে দোকানে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ভালো মনিটরিং রাখার কথাও বলে তিনি।
টিসিবি সূত্রে জানা যায়, এ বছর রাজধানীতে ১০০টি ট্রাকের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছে। এসব ট্রাক রাজধানীতে টিসিবির দুটি গোডাউন থেকে তাদের নির্ধারিত পণ্য নিয়ে থাকে। সকাল ৭টা থেকে এসব ট্রাক তাদের পণ্য নেয়া শুরু করে।
তবে অভিযোগ রয়েছে ট্রাকগুলো তাদের পণ্য বিক্রির নির্ধারিত স্থানে যেতে অনেক দেরি করে। কোনও কোনও ট্রাক দুপুর ৩টায় তাদের পণ্য বিক্রি শুরু করে। এতে করে অনেকে আগে থেকেই সাধারণ মানুষের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়ে যায়।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানান, আমরা ১০০টি ট্রাকের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে পণ্য বিক্রি করা হয়। সকাল ৭টা থেকে দুটি গোডাউনে ট্রাকে পণ্য নেয়া শুরু হয়। এখানে ট্রাকে দীর্ঘ লাইন হয়ে যায়। ফলে অনেকে সময় কিছু কিছু ট্রাকের পণ্য পেতে দেরি হয়ে যায়।
স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আমাদের লোকজন ক্রেতাদের সচেতন করে। কিন্তু অনেক সময় লোকজন তা মানতে চায় না।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, ট্রাক থেকে একজন সাধারণ ক্রেতা ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি মসুর ডাল, ১০০ টাকা দরে দুই থেকে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল এবং ২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে পারেন। এছাড়া ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি ছোলা ও ৮০ টাকা কেজি দরে এক কেজি খেজুর কিনতে পারেন। সেই হিসিবে এবছর রমজানের পণ্যের দাম কিছুটা বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে টিসিবি। এতে প্রতি কেজি তেলের দাম ১০ টাকা। ডাল, চিনির দাম আগের থেকে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
দাম বাড়ার পরেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে টিসিবি পণ্যের চাহিদা। ফলে দীর্ঘ হচ্ছে লাইনের সারি। অনেকে লাইনের দাঁড়িয়েও পণ্য না পাওয়ার অভিযোগ গ্রাহকদের।
বর্তমানে রাজধানীর বাজারগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেল কোম্পানি ভেদে বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৩৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৬২০ টাকা থেকে ৬৬০ টাকা দরে। খুচরায় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩২ থেকে ১৩৫ টাকা দরে। পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা দরে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও