অলিগলিতে খোলা দোকানপাট, বসেছে ভ্রাম্যমান বাজারও বিধিনিষেধের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটিতে ফাঁকা রাজধানী
সুজন কৈরী : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ৮দিনের বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। বিধিনিষেধের মধ্যেও যেসব অফিস খোলা ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সেগুলোও বন্ধ রয়েছে। এর আমেজে রাজধানী ঢাকার রাস্তা ছিলো ফাঁকা। গত দুদিনের তুলনায় শুক্রবার রাস্তায় মানুষ ও যানবাহনের চাপ ছিলনা। যারা বের হয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বের হয়েছিলেন। তবে অলিগলিতে ভ্রাম্যমান বাজার, ও লোকজনের চলাচল প্রায় স্বাভাবিক ছিল। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে তৎপর থাকতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিধিনিষেধের গত দুদিনের তুলনায় শুক্রবার সকাল থেকে রাস্তায় গাড়ির চাপ কম ছিলো। খুব জরুরি কাজে বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাসা থেকে বের হয়েছেন অনেকেই। এছাড়া জুম্মার নামাজ আদায়ের জন্যও বের হয়েছেন অনেকে। সড়কে বেশ কিছু রিকশা চলতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে কিছু মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার চলাচল করছে। তবে গত দুদিনের তুলনায় কম। এছাড়া ওষুধ, জরুরি পণ্য, খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের গাড়িও চলাচল করতে দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে খোলা রয়েছে ছোট ছোট মুদিও দোকান, ওষুধের দোকান, চায়ের দোকান এবং ভ্যান গাড়ি নিয়ে বসেছে ভ্রাম্যমান দোকানও। মাঝে মধ্যে পুলিশ গিয়ে দোকানগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। পুলিশ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবারও খুলছে দোকানগুলো। তবে কৌশল হিসেবে দোকানের সাটার পুরোপুরি না খোলে অর্ধেক খোলা রাখছেন দোকানীরা। বাইরে কোনো কিছু ঝুলিয়েও রাখছেন না। দূর থেকে দেখলে দোকান বন্ধ মনে হবে। রমজান মাস হওয়ায় চায়ের দোকানগুলোতে কাপড় টাঙানো রয়েছে। এছাড়া অলিগলির বিভিন্ন স্থানে দুই থেকে তিনজন আবার কোথাও এর চাইতে বেশি তরুণকে একত্রে চলাচল ও কোথাও দাড়িয়ে খোশগল্পে মেতে থাকতে দেখা গেছে। তাদের কারও কারও মুখে মাস্ক ছিল আবার কারও থুঁতনিতে ঝুলছিল আবার কারও ছিলনা।
মগবাজারের সোনালীবাগে একজন চা দোকানী বলেন, এই দোকান দিয়েই আমার সংসার চলে। এটি বন্ধ থাকলে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে। সংসার চালানোর কথা বিবেচনা করেই দোকান খোলা রেখেছি। তবে সাধারণ সময়ের চেয়ে কাস্টমার একেবারেই কম। রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা শাহবাগে কয়েকটি রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ কয়েকটি জরুরি পণ্য পরিবহনের গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এলাকা, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, জাতীয় জাদুঘর, টিএসসি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, কারওয়ান বাজার বা মৎস্য ভবনসহ আশপাশের প্রধান সড়কগুলোও ছিল একেবারেই ফাঁকা ছিলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন তৎপর। শাহবাগ মোড়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য শওকত বলেন, আমরা মানুষকে সচেতন করছি। যারা আসছেন, তাদের মাস্ক আছে কিনা বা কেন বাইরে এসেছে, সেসব বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
মালিবাগে রিকশাচালক মজনু বলেন, গত দুদিন সকাল সাড়ে ৯টার ভেতরে চার-পাঁচটা ক্ষ্যাপ মারতে পারছিলাম। কিন্তু আজ মাত্র একটা মারছি। আজ মানুষ নাই। রাস্তা ফাঁকা। অফিস নাই, তাই হয়ত কেউ বের হচ্ছে না।
রামপুরা নতুন সড়ক ও মধুবাগ থেকে হাতিরঝিলে বের হওয়ার মুখে বাঁশ দিয়ে ব্যরিাকেড দেওয়া হয়েছে। তবে যাতায়াতের জন্য সড়কের একাংশ খোলা রয়েছে। সেইদিক দিয়েই লোকজনকে চলাচল করতে দেখা গেছে।
বাড্ডার শাহজাদপুরে এনআরবি ব্যাংকের কর্মকর্তা দিদার হোসেন বলেন, তিনি বাজারে যাচ্ছিলেন সাপ্তাহিক বাজার করতে। ব্যাংক বন্ধ হওয়ায় বাসা থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু সাপ্তাহিক বাজারের জন্য বের হতে হয়েছে।
রাস্তায় মানুষেরর চাপ কম থাকায় শুক্রবার চেকপোস্টেও তেমন ব্যস্ততা দেখা যায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। মাঝে মাঝে দুয়েকজন যাত্রী যাচ্ছেন, তাদের মুভমেন্ট পাস আছে কি না চেক করতে দেখা গেছে দায়িত্বরতদের।
গুদারাঘাট চেকপোস্টে কর্মরত সার্জেন্ট মো. সাহেদ বলেন, অফিস বন্ধ হওয়ায় রাস্তায় তেমন একটা মানুষ নেই। যারা বের হয়েছেন, তাদের মুভমেন্ট পাস চেক করছি। তারা জরুরি প্রয়োজনেই বের হয়েছেন।
রাজারবাগ মোড়ে একটি চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যদের কয়েকটি মোটরসাইকেলকে দাঁড় করিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, বের হওয়ার কারণ এবং মুভমেন্ট পাস চেক করতে দেখা গেছে।