পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৫০ শতাংশ
অর্থনীতি ডেস্ক : করোনা মহামারীর মধ্যেও এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে দিনরাত চলছে নির্মাণযজ্ঞ। এরইমধ্যে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৫০ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাই করোনা বা প্রখর রোদের মধ্যেও থেমে নেই নির্মাণ কাজ।
প্রকল্পের স্প্যান, এমব্যাংকমেন্ট, মেজর ব্রিজ, কালভার্ট, আন্ডারপাস, প্রিকাস্ট বক্সগার্ডার সেগমেন্ট, ভায়াডাক্ট, পিয়ারসহ অন্যান্য কাজের নির্মাণ যজ্ঞ চলছে। তিনভাগে শিফটিং করে কাজ করছেন শ্রমিকরা। সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক তালিকাভুক্ত করা হয়।
তিন ভাগে বিভক্ত প্রকল্পের কাজ হচ্ছেÑ ঢাকা-মাওয়া, মাওয়া-ভাঙা ও ভাঙা-যশোর সেকশন। এরমধ্যে ঢাকা-মাওয়া ও ভাঙা-যশোরের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২৩ সাল। আর মাওয়া-ভাঙা সেকশনের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সাল। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট (সিএসসি) কাজ করছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বহুল আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা হতে যশোর পর্যন্ত ১৬৯কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ উন্নয়ন করতেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। মাওয়া-ভাঙা অংশের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে সড়কপথ চালুর দিন হতেই ভাঙা পাচুরিয়া রাজবাড়ী সেকশনের মাধ্যমে বিদ্যমান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। ঢাকা এবং যশোরের সঙ্গে রেলওয়ে সংযোগ স্থাপনের নির্মাণ কাজ একই সঙ্গে শুরু হয়ে ২০২৩ সালে সমাপ্ত হবে।
প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন, ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ ও সাইডিং এবং ৩ কিলোমিটার ডাবল লাইনসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। ২৩ দশমিক ৩৭৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট; ১ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার র্যাম্পস; ৬৬টি মেজর ব্রিজ; ২৪৪টি মাইনর ব্রিজ, কালভার্ট ও আন্ডারপাস; ১টি হাইওয়ে ওভারপাস ও ২৯টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মাণ এবং ৬টি বিদ্যমান স্টেশনের উন্নয়ন, ২০টি স্টেশনে টেলিযোগাযোগসহ সিবিআই সিস্টেম সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপন, ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ এবং দুই হাজার ৪২৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। তিন ভাগে বিভক্ত প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙা অংশের অগ্রগতি ৬৬ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৩৬ শতাংশ এবং ভাঙা-যশোর সেকশনের ২৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের পানগাঁও কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকরা। কেউ রড কাটার কাজ করছেন আবার কেউ দিচ্ছেন জোড়া। শ্রমিকদের কাজের টুংটাং শব্দে পুরো কারখানার এলাকা জমে উঠেছে। প্রতিটি ব্যাডেই চলছে সেগমেন্ট নির্মাণ। এসময় শ্রমিকদের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেখা গেছে। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের বাইরে সমানতালে প্রকল্পের উড়াল ভায়াডাক্টের নির্মাণ কাজও এগিয়ে যেতে দেখা গেছে। সেখানে সিএসসি’র সদস্যারা সুপারিভশন করছেন। উড়াল সড়কের নিচের অস্থায়ী সড়কে ধূলা দূষণ রোধে পানি ছেটানো হচ্ছে।
প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট (সিএসসি) এর প্রকল্প ম্যানেজার-২ (ঢাকা টু মাওয়া) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, করোনার মধ্যেও আমাদের কাজ এগিয়ে চলছে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে। সময় বাড়ানোর কোনও প্রয়োজন হবে না। দিনের পাশাপাশি রাতেও দ্রুত গতিতে কাজ হচ্ছে। আমরা আশা করছি আমাদের মাওয়া থেকে ভাঙা পর্যন্ত অংশ পদ্মা সেতুর সঙ্গে উদ্বোধন হবে। বাকি যে দুটি সেকশন আছে তার কাজও সঠিক সময়ে শেষ করতে পারবো।
প্রকল্পে করোনার কোনও প্রভাব পড়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমগ্র দেশের মতো আমাদের প্রকল্পেও করোনার প্রভাব অবশ্যই আছে। আমাদের যে জনবল তার ভেতরে কিছু অংশ কোয়ারেন্টিনে থাকে। বাকি অংশ গিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কাজের গতি আরও বাড়াতে আমরা সম্প্রতি সিএসসির পক্ষ থেকে বেশ কিছু অতিরিক্ত লোক অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছি। যেন আমাদের সুপারভিশন কার্যক্রম দিনরাত চালিয়ে যেতে পারি। করোনা মহামারি আমাদের মাঝে প্রভাব ফেললেও তা কতটা মিনিমাইজড করা যায় সে বিষয়ে আমরা সর্বদা ওয়াকিবহাল।
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের সেকশন-২ এর ব্রিজ অ্যান্ড ভায়াডাক্ট ইনচার্জ মো. আমিনুল করিম বলেন, আমাদের দুটি কাস্টিং এরিয়াতে কাজ হচ্ছে। এতে ৬৩০০টি সেগমেন্ট তৈরি হবে। এটিতে ২০টি কাস্টিং বেড আছে। প্রতিদিন আমাদের ২০-২৫টি করে সেগমেন্ট হচ্ছে। এতে সব মিলিয়ে ৩৬০০ এর বেশি কাস্টিং হয়ে গেছে। চলতি বছরের মধ্যে সব সেগমেন্ট কমপ্লিট হয়ে যাবে। এরই মধ্যে আমাদের অংশের প্রায় চার কিলোমিটার উড়াল ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন। সম্পাদনা : শোভন দত্ত