আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৫
সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের ৮ বছর কারাদÐ, ১০ লাখ টাকা জরিমানা
মামুন খান : মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ছড়ানোর মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের আট বছর কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় পাঁচ বছর কারাদÐ ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং ২৯ ধারায় তিন বছর কারাদন্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরো ৬ মাস কারাগারে থাকতে হবে। জরিমানার টাকা নুসরাতের পরিবারকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ৩১ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে খালাস দেন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ, মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এবং নুসরাতের পরিবার। তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার সুমন বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, কারণ তিনি মামলা করার সাহস দিয়েছিলেন। তার সাহস দেয়ার কারণে সফলতার সঙ্গে মামলাটা শেষ করতে পেরেছি। পিবিআইকেও ধন্যবাদ কারণ তারা মামলাটি তদন্ত করে একটি সুন্দর একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন একারণে ন্যায়বিচার ও মামলাটি সম্পন্ন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যতো পুলিশ স্টেশন আছে যেসব পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন এটা একটা জমিদার বাড়ি, জমিদাররা যে ধরনের আচরণ করেন এই ধরনের আচরণ করেন তাদের জন্য এ রায় অশনি সংকেত। অনেকে মনে করেন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে রায় হয় না এবং শক্তিশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করলে ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। আজ প্রমাণ হলো বাদী শক্তিশালী হলে, তার মানসিকতা শক্তিশালী থাকলে, কিছুতে ভয় না পেলে একটু দায়িত্ব নিলে যে কোন অন্যায়ের ন্যায়বিচার আদালতের মাধ্যমে করা সম্ভব।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীমও রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
রায়ে মোয়াজ্জেমের কি হয় তা শুনতে সোনাগাজী থেকে আদালতে আসেন নুসরাতের ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান এবং মামা সৈয়দ সেলিম। মোয়াজ্জেমের সাজার রায় শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।
নুসরাতে মামা সৈয়দ সেলিম বলেন, নুসরাত আমাদের ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু শিক্ষা দিয়ে গেছে কোন প্রতিষ্ঠানে এধরনের ঘটনা এর প্রতিবাদ করতে। যেন পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। এটা একটা প্রত্যাশিত রায়। নুসরাত হত্যা মামলায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আসামি করা হয়নি। ব্যারিস্টার সুমন যদি মামলা না করতে তাহলে তিনি বেঁচে যেতেন। ওসি সাহেব ওই ঘটনার সমাধান তখনই করতে পারতেন কিন্তু তিনি সেটা না করে ভিডিও করে পরবর্তীতে তা ছেড়ে দেন। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। সাজা যেন বহাল থাকে সে প্রত্যাশা করেন তিনি। এদিকে নুসরাতের মা শিরিন আক্তারও আদালতে রায় শুনতে আসতে চেয়েছিলেন। তবে অসুস্থ থাকায় তিনি আসতে পারেননি।
নুসরাতের ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বলেন, ওসি মোয়াজ্জেমের যে সাজা হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। মামলা করার জন্য তিনি ব্যারিস্টার সুমনকে ধন্যবাদ জানান।
তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ। উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সকাল পৌনে ১০টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তাকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজত খানায় রাখা হয়েছে। রায় ঘোষণার আগে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। দুপুর ২টার কিছু পরে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এসময় তাকে একটু বিমর্ষ দেখাচ্ছিলো। রায় ঘোষনার পর তাকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২৮ নভেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। রেজা