গায়েবি মাজার-দীঘি এবং শেখ রেজা খন্দকার (রহ.)
খন্দকার বিল্লাল হোসাইন
গায়েবিভাবে হওয়া ৭ একর জমির ওপর বিশাল দীঘির দক্ষিণ পাড়ে শেখ রেজা খন্দকার (রহ.) এর গায়েবি মাজার। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অগণিত মানুষ মাজার জিয়ারত ও দীঘিতে গোসল করতে আসেন। বিশেষ করে নিঃসত্ত্বার নারীগণ মাজারের পাশে থাকা কাঠাল গাছের মচি খেতে ও দীঘিতে গোসল করতে আসেন। প্রচলিত আছে, কাঁঠাল গাছের মচি ও গোসল করার ফলে নারীগণ আল্লাহ্ মেহেরবানতে সন্তান লাভ করেন। প্রায় ৫০০ বছর আগে ইসলাম প্রচারের জন্য শেখ রেজা খন্দকার (রহ.) এ অঞ্চলে আসেন। বাংলাদেশে যে ৩৬০ আউলিয়া ইসলাম প্রচার করতে আসেন তিনি তাদের একজন।
দীঘির উত্তর পাড়ে রয়েছে শেখ রেজা খন্দকার (রহ.) ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও ইতিমখানা। এখানে শত শত ছাত্র পড়াশনা করছে। বর্তমানে মাজার ও দীঘিটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার পেরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে পূর্ব দিকে শাকতলী গ্রামে অবস্থিত ‘গায়েবি মাজার ও দীঘি’। নাঙ্গলকোটসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা থেকে লোকজন আসেন এ আধ্যাত্মিক পরিবেশে অবস্থিত মাজার ও দীঘি দেখতে। এ পরিবেশে যে কারোরই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। এখানে কেউ আসেন মাজার জিয়ারত করতে, আবার কেউ আসেন এক নজর দেখার জন্য। লোকমুখে প্রচলিত, পঞ্চমদশ শতাব্দীর দিকে শেখ রেজা খন্দকার (রহ.) নামে একজন ধর্ম প্রচারক কাকৈরতলা গ্রামে আসেন। তিনি কাকৈরতলা খন্দকার বাড়ি গোড়াপত্তন করেন। উনার বংশদররা বর্তমানে কাকৈরতলা খন্দকার বাড়িতে বসবাস করেন। তিনি সিলেট হযরত শাহ জালাল (রহ.) এর সঙ্গে আসা ৩৬০ আউলিয়ার একজন। পরে তিনি হযরত শাহ জালালের নির্দেশে এ অঞ্চালে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এই মাজার ও দীঘি হওয়ায় আগে এখানে খুব কম জনবসতি ছিল।
পরে আস্তে আস্তে পুরো এলাকায় মানুষের বসবাস শুরু হয়। প্রতি দিন অগণিত মানুষ এখানে মানত ও জিয়ারতের উদ্দেশে আসেন বলে জানান বর্তমানে মাজারটির তত্ত্বাবধায়ক। মাজারের মানতের টাকা শেখ রেজা খন্দকার (রহ.) এতিমখানায় ব্যয় করা হয়। প্রতি রছর এখানে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের আয়েজন করেন স্থানীয়রা। শেখ রেজা খন্দকার (রহ.) মাদ্রাসার সহকারী প্রধান শিক্ষক রাসেল আহমেদ বলেন, প্রতি বছর মাজার ও দীঘি থেকে আয় হয় ১০-১২ লক্ষ টাকা, এই টাকা মাদ্রাসা পরিচালনায় ব্যবহার করা হয়। প্রতি বছর মাদ্রাসাটি খুব ভালো ফলাফল করে কিন্তু নিজস্ব নামে স্বীকৃতি না থাকায় পরীক্ষা ফল ভালো করেও সুনাম পায় অন্য মাদ্রাসা। শেখ রেজা খন্দকার (রহ.) মতো আউলিয়ার কথা বিবেচনা করে মাদ্রাসাটিকে যেন স্বীকৃতি দেওয়া হয়, এ দাবি এলাকার মানুষের। অশীতিপরবৃদ্ধ শেখ রেজা খন্দকার (রহ.) বংশধর খন্দকার রুহুল আমিন বলেন, আমি আমার পিতার কাছে শুনেছি শেখ রেজা খন্দকার (রহ.) হঠাৎ একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে যান তার ভাগিনা আলিমুদ্দিন খন্দকারকে স্বপ্নে দেখান যেন, আল্লাহ কুদরতে শাকতলী মৌজায় গায়েবি দীঘি হয়েছে তার উত্তর পাশে আমি শায়িত। পরে সেখানে গিয়ে নতুন কবর ও দীঘি দেখতে পান। এবং মৃত্যুর পরও তিনি ঘোড়া দিয়ে খন্দকার বাড়ির চারপাশ ঘুরে যেতেন। তিনি এই ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিগগিরই এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মাজার ও দীঘি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিবেন বলে জানান।
লেখক: সাংবাদিক