আমি জানতাম হে অর্জুন…
জাকির তালুকদার
রামমোহন রায় পারেননি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পারেননি, রবীন্দ্রনাথ পারেননি, বেগম রোকেয়া পারেননি, কাজী নজরুল ইসলাম পারেননি, ঢাকার শিখা গোষ্ঠী পারেননি। এই রকম না পারার উদাহরণ অসংখ্য। তারা পারেননি মানুষকে মানুষ করে তুলতে। পারেননি ঘুষ, দুর্নীতি, কুশিক্ষা, ক্ষমতার অপব্যবহার, নারী নির্যাতন, নারীশরীরের ব্যবসা, ধর্ষণ, মাদক, খুন-জখম বন্ধ করতে।
কারণ?
অনেকগুলি।
তার মধ্যে বড় কারণ হচ্ছে রাষ্ট্রশক্তি তাদের হাতে ছিল না।
রাষ্ট্র মানে সরকারি দল, বিরোধী দল, আমলাতন্ত্র, সামরিক বাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী, পুলিশ, বিচারবিভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া। রাষ্ট্র হচ্ছে সেই যন্ত্র যার হাত সর্বোচ্চ শিখর থেকে নিম্নতম বালুকণা পর্যন্ত বিস্তৃত।
রবীন্দ্র-রোকেয়ারা ভেবেছিলেন যে সমাজের অগ্রসর অংশের চাওয়াটাই যথেষ্ট। তাদের চাওয়াকে রাষ্ট্র উপেক্ষা করবে না। কিন্তু রাষ্টক্ষমতার চাওয়া যে সবসময় অন্যরকম হয়ে থাকে, সেটি তাদের ভাবনায় আসেনি। যে রাষ্ট্রব্যবস্থা চায় নিজের স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করতে, সে কখনো সমাজকে সুস্থ হতে দেবে না। বরং ছড়িয়ে দেবে নতুন নতুন রোগজীবাণু। পুরনো রোগকে করে তুলবে আরও দগদগে।
রাষ্ট্রের এই ক্ষমতা এবং চরিত্র না বুঝে যারা এক-একটা আলাদা আলাদা ইস্যু নিয়ে চিৎকার করেন, তারা আসলে প্রত্যেকেই এক-একটা এনজিও। সেটা নারীবাদী হোক আর শিক্ষা-সংস্কার হোক। সবগুলো ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের শক্তির সঙ্গে না মেলালে কিছু আত্মতৃপ্তি ছাড়া আর কিছুই মিলবে না।
আমরা কোন শক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে চাইব?
যে শক্তি রাষ্ট্রের গতিপথ আর সমাজের চাওয়ার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করবে।
আকাশ থেকে নাজিল হবে না সেই রকম শক্তি। গড়ে তুলতে হবে আপনাতে, আমাতে মিলেই।
-ফেসবুক থেকে