প্রশ্ন ফাঁসকারীরা জাতির কলঙ্কিত সন্তান
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে পিইসি ২০০৯ সালে চালু হয়। শিশু শিক্ষার উপর গুরুত্ব বাড়াতে বা নজর দিতে এই পিইসি পরীক্ষা চালু করা হয়। শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার কমানোর জন্য এই দিকে নজর দেওয়া হয়। পিইসি পরীক্ষাটি অবশ্যই চালু থাকা উচিত। কারণ, এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা রেজাল্টা ভালো করার জন্য পড়াশোনায় মন দেয়। তবে এর কারণে বাচ্চাদের উপর একটু বাড়তি চাপ পড়ছে। এটা কমানো দরকার। বর্তমানে প্রশ্ন ফাঁসের যে ঘটনা ঘটছে, এটার ফলে বাচ্চাদের উপর নানা খারাপ প্রভাব পড়ছে। এটা নিয়ে আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। এটা নিয়ে এখন সুশীল সমাজ জেগে উঠছে যেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা যায়। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতেই হবে। যখন একটি শিশুর হাতে নকল দেওয়া হয় বা আগাম প্রশ্ন দেওয়া হয়, শিশুটির কিন্তু পরীক্ষা সম্পর্কে ধারণা পাল্টে যায়। সে বুঝে ফেলে। সে এস হয়তো তার বাবাকে বলে, বাবা- সকালে স্যার যে অঙ্কগুলো করিয়েছেন, সেগুলোই পরীক্ষায় এসেছে। এটা বলার পর একজন সচেতন অভিভাবক বুঝতে পারেন, কী হয়েছে? এজন্য আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। যারা প্রশ্ন ফাঁস করবে, তাদেরকে ধরে আইনের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তবে সরকার এই নিয়ে আইন করছে, যারা শিক্ষক হয়ে প্রশ্নফাঁসের কাজগুলো করেন, তারা জাতির কলঙ্কিত সন্তান। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। একটা বিষয় হচ্ছে, ছোট একটি বাচ্চাকে ইংরেজিতে আনসিন নামে একটি সিস্টেম এর ফলে বাচ্চাদের উপর প্রচ- চাপ পড়ে। তারা গাইড বই নির্ভর হয়ে পড়ে। এই আনসিন বিষয়টা উঠিয়ে দিয়ে প্রশ্নটা সিন করতে হবে। প্রশ্নফাঁস শিক্ষা প্রশাসন থেকেই হচ্ছে। তারা প্রশ্নফাঁস করছে বলেই সাধারণ শিক্ষকরা-অভিভাবকরা প্রশ্নটা পাচ্ছে। তাই তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে সাজা দিতে হবে। প্রশ্নফাঁস একটি চুরি, দুর্নীতি। আর এই চুরির প্রবণতা আমাদের ছাত্রদের মধ্যে প্রাথমিক অবস্থায় প্রবেশ করলে তাদের জীবন ও পরিবারে এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যারা প্রাথমিক অবস্থায় এই চুরি, দুর্নীতি শিখছে, তারা বড় হয়েও দুর্নীতিবাজ ছাড়া আর কি হবে ? যারা শিখাচ্ছে, বাধা না পাওয়ায় তারা তা প্রতিবছরই করছে, যা ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে তাদেরকে সহায়তা করছে। তাদের উদ্দেশ্য ব্যবসায়িক। তারা প্রশ্নফাঁসের জন্য হয়তো ভাল পরিমান টাকা বিনিয়োগও করছে। গার্ডিয়ানরা সচেতন হতে হবে যে, আমার সন্তানকে আমি কোন প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছি?
পরীক্ষার দিন সকাল ৬টা বা ৭টার সময় তারা স্কুলে গিয়ে কী পড়ছে? সত্যিই যদি আমাদের সন্তানকে মানুষ করতে হয়, তাহলে ওই ধরনের কলঙ্কিত শিক্ষক ও কলঙ্কময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে আবারো খুব সুচিন্তিতভাবে ভাবতে হবে। প্রতিবছর প্রশ্ন ফাঁস করে কিছু কিছু স্কুল ভাল ফলাফল দেখায়, সেসব স্কুলের এই ভুয়া ফলাফলের প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে হবে। ভাবতে হবে, যিনি বা যারা চৌর্যবৃত্তিতে জড়িত, তিনি বা তারা আমার সন্তানকে কী শেখাবে? নিশ্চয়ই চুরি। আমি কী আসলেই এটা চাই? সরকারের উচিত, যে স্কুলগুলো প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা, তাদের এমপিও থাকলে তা বাতিল করা। সর্বোপরি তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা। যে শিক্ষকগুলো বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত তাদের সাজা দিতে হবে।
পরিচিতি : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক সমিতি
মতামত গ্রহণ : গাজী খায়রুল আলম
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন