মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে পলিসি থাকা জরুরি
আহমেদ রাজু : খুব শিগগিরই সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে চুক্তি করতে চায়। এটি ভালো উদ্যোগ। তবে চুক্তির বিষয়ে একটি পলিসি থাকা জরুরি। কারণ, মিয়ানমারের সঙ্গে আগের চুক্তি সফল হয়নি। আর তাদের বিশ্বাস করারও কোনো কারণ নেই বলে অভিমত দিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি উপদেষ্টারা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টাা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, মিয়ানমার বিভিন্ন দেশে গ্যাস রপ্তানি করে। আমরাও সেদেশ থেকে গ্যাস আনতে পারি। কারণ, আমাদের গ্যাসের সংকট রয়েছে। আমরা যদি তুলনামূলক কম দামে গ্যাস আনতে পারি, তা দেশের জন্য ভালো হবে। তবে গ্যাস আনার আগে অন্য দেশে খোঁজ নিতে হবে। শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের বিষয়েও জোর দেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। তার আগে চোরাই পথে বাংলাদেশে মিয়ানমারের পণ্য আসা বন্ধ করতে হবে। এব্যাপারে সরকারকে কঠোর হতে হবে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাণিজ্য চুক্তিতে কড়িডোর ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্থলপথে মিয়ানমার থেকে পণ্য আনলে আমরা অনেক লাভবান হবো। কেবল বাংলাদেশই নয়, চীন ও মিয়ানমারও লাভবান হবে। এতে তিন দেশের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক কমে যাবে। মিয়ানমারের সঙ্গে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও নৌবাণিজ্য ছিলো। তাই নৌবাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। শুল্কমুক্ত সুবিধার ক্ষেত্রেও ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে অর্থ লেনদেনে সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাটিও দূর করতে হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আগে একটি পলিসি তৈরি করা জরুরি। অনেক দিন ধরেই মিয়ানমার থেকে গ্যাস আনা নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু গ্যাস কীভাবে আনলে আমরা লাভবান হবো, তা আগে ঠিক করতে হবে। চীন ও ভারত সেখানে গ্যাস উত্তোলন করে। সেই গ্যাস তারা তাদের দেশে নিয়ে যায়। আমরা কী সেদেশ থেকে তরল গ্যাস আনবো? এতে আমাদের লাভ হবে না। আমরা মিয়ানমারে বিনিয়োগ করে গ্যাস আনলে বেশি লাভবান হবো।
ড. শামসুল আলম বলেন, মিয়ানমারের অর্থনীতি চীন ও ভারত নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ভারতের সম্মতি ছাড়া মিয়ানমার সেদেশে বিনিয়োগ চুক্তি করবে না। তাই আমাদের বিনিয়োগ চুক্তিটি কেমন হবে, তা নিয়ে একটি সুদূর প্রসারি পলিসি তৈরি করতে হবে। আর এটি করতে না পারলে সেখানে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারবে না।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে আমরা বিদ্যুতেও বিনিয়োগ করতে পারি। আমাদের দেশে বিদ্যুত ঘাটতি আছে। আমরা নেপাল ও ভারতে বিদ্যুতে বিনিয়োগ করে উৎপাদিত বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে নিয়ে আসতে পারি। কিন্তু সেটি কতটুকু সম্ভব হবে, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। কারণ, আমাদের দেশেই অনেক ভালো প্রকল্পও আলোর মুখ দেখেনি বলে তিনি জানান। সম্পাদনা: উম্মুল ওয়ারা সুইটি