বাবার কোনো চাওয়া অপূর্ণ নেই : সাব্বির সিদ্দিকী না ফেরার দেশে বারী সিদ্দিকী সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া
অভি মঈনুদ্দীন : ‘শুয়া চান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘তুমি থাকো কারাগারে’, ‘রজনী’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’- এমন অনেক হৃদয়গ্রাহী গানের শিল্পী বারী সিদ্দিকী। শুধু গান নয় বাঁশির সুরে শ্রোতাহৃদয় মোহিত করার পাশাপাশি গীতিকার, সুরকার হিসেবেও সংগীতে অবদান রেখে গেছেন তিনি । উপমহাদেশের লোক ও আধ্যাত্মিক ঘরানার প্রখ্যাত এই সংগীতশিল্পী গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। নন্দিত এই সংগীতশিল্পীর ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী তার মৃত্যুর সংবাদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। এসময় তিনি বলেন, আমার বাবার কোনো চাওয়া অপূর্ণ নেই। তিনি বেঁচে থাকাকালীন সব ইচ্ছাই পূরণ করে গেছেন। মারা যাওয়ার আগে শুধু জানিয়েছিলেন- তাকে যেন নেত্রকোনার চল্লিশা বাজারের তার নিজের বাউলবাড়িতে দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে দ্বিতীয় এবং নেত্রকোনা সরকারি কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে কারলিতে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কারলির বাউল বাড়িতে চতুর্থ নামাজে জানাজা শেষে বিকালের শেষ আলোয় বারী সিদ্দিকীকে দাফন করা হয়।
নেত্রকোনায় ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর বারী সিদ্দিকীর জন্ম। বারী তার বাঁশি শেখা এবং গান শেখার দুটোরই উৎসাহ পেয়েছেন তার মায়ের কাছ থেকে। মার কাছ থেকে জীবনে তিনি প্রথম যে গানটির সুর বাঁশিতে তুলে নিয়েছিলেন সেই সুরটিই তিনি পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদ’র ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেছিলেন। গানের শিল্পী হিসেবে ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেও বারী সিদ্দিকী সবসময়ই নিজেকে একজন বংশীবাদক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। একজন বংশীবাদক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি বাঁশি বাজিয়েই শ্রোতা দর্শককে মুগ্ধ করেছেন। ১৯৯৯ সালে ফ্রান্সে ওয়ার্ল্ড ফ্লুট সম্মেলনে এই উপমহাদেশ থেকে তিনিই প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
গত শুক্রবার ( ১৭ নভেম্বর) রাতে হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অচেতন হয়ে পড়লে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল তাকে। ৬ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর বারী সিদ্দিকী গত রাত ২টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
বারী সিদ্দিকীর মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে পুরো সংস্কৃতি অঙ্গন। তার স্মৃতিচারণ করেছেন বেশ কজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
রুনা লায়লা : বারী সিদ্দিকীর হঠাৎ এভাবে চলে যাওয়ার বিষয়টি সত্যিই খুব দুঃখজনক। আমাদের মিউজিক ইন্ডাষ্ট্রির খুব ক্ষতি হয়েগেলো। তার ইউনিক একটি ভয়েজ ছিলো।
ফরিদা পারভীন : দেশে অনেক ডাক্তার আছেন, ইঞ্জিনিয়ার আছেন, শিল্পপতি আছেন, কিন্তু বারী সিদ্দিকী দেশে একজনই আছেন। সেই বারী সিদ্দিকী শেষ পর্যন্ত চলে গেলেন। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য অনেক কষ্টের, বেদনার। কারণ বারী সিদ্দিকী যুগে যুগে জন্মায়না।
শহীদুল্লাহ ফরায়েজী ঃ বারী ভাই আমাদের অনুভুতিকে ঋণী করে গেছেন, আমাদের হৃদয়কে ঋণী করে গেছেন। আমাদের অনুভূতি যতোদিন থাকবে, আমাদের হদয় যতোদিন থাকবে বারী ভাই ততোদিন আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।
সামিনা চৌধুরী ঃ ঘুম থেকে উঠেই বারী ভাইয়ের চলে যাবার খবরটি পাবার পর থেকে কোনোভাবেই বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না। খুব, খুউব কষ্ট হচ্ছে আমার। খারাপ লাগছে এই ভেবেও যে তাকে হাসপাতালে দেখতে যেতে পারলাম না শেষ সময়ে।
আইয়ূব বাচ্চু ঃ বারী চলে গেছেন, সম্পদ হারানোর মিছিলে বাংলাদেশ বিশাল এক সম্পদকে হারালো। তার বাঁশি তার কন্ঠ দুই মিলিয়েই তিনি নিজেকে বারী সিদ্দিকী হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।
কুমার বিশ্বজিৎ ঃ বারী ভাই চলে গেছেন, সত্যিই বড় অসময়ে চলে গেছেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো বারী ভাইয়ের সুরে তিনটি গান গাইবার। আবার আমার সুরে ‘ঢাকা ড্রিম’ চলচ্চিত্রে তিনি প্লে-ব্যাক করেছেন।
অ্যা-্রু কিশোর ঃ চলমান ফোক সঙ্গীতে এক অন্যরকম ধারার সৃষ্টি করেছিলেন বারী ভাই। তার গায়কী, তার বাঁশি সবাইকে মুগ্ধ করতো। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে ফোক ঘরানার গানে এক অন্যরকম দরজার সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু যিনি সৃষ্টি করলেন তিনিই চলে গেলেন অসময়ে।
জাহিদ হাসান ঃ বারী ভাইয়ের কী এমনই বা বয়স হয়েছিলো যে তাকে চলে যেতে হবে। তার এই চলে যাওয়াটা মেনে নেবার নয়। আমি বলবো এই মৃত্যু অকাল মৃত্যু। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম ছবি ঃ আসলাম হাবিব