ক্ষমতাগ্রহণ অনুষ্ঠানে মুগাবেকে সম্মান জানালেন নানগাগওয়া
কামরুল আহসান : শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে জিম্বাবুয়ের অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন এমারসন নানগাগওয়া। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারে জাতীয় ক্রীড়া মাঠে লক্ষাধিক দর্শক ও অসংখ্য গণ্যমান্য ব্যক্তির সামনে তিনি বললেন, মুগাবে আমার পিতার মতো, আমি তার কাছ থেকেই রাজনীতির দীক্ষা নিয়েছি।
নানগাওয়া সেই ১৯৮০ সাল থেকেই রবার্ট মুগাবের ডান হাত হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে তাকে অপসারণ করে স্ত্রী গ্রেসকে সেই স্থানে অধিষ্ঠিত করতে চাওয়ায় দেশজুড়ে ভয়ানক সহিংসতা দেখা দেয়। নানগাগওয়াও দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। বিক্ষুব্দ জনজণ মুগাবেরে বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে। নিজের দল থেকেও মুগাবেকে পদচ্যুত করা হয়। অবশেষে মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে মুগাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। বুধবার নানগাগওয়া দেশে ফিরেন।
এমারসন নানগাগওয়া তার বক্তব্যে বলেন, তিনি দেশের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন, জনগণের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন। যথাসময়ে নির্বাচন দেবেন। দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করবেন। জিম্বাবুয়ের একদিন পরিচিত ছিল আফ্রিকার রুটির ঝুড়ির দেশ হিসেবে। আজ দুর্নীতির কারণে দেশটির অর্থনীতি ভঙ্গুর। যত দ্রুত সম্ভব দ্রুত দেশের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অর্থনীতির উন্নয়ন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ভাষণে তিনি পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের প্রতি কোনো বিদ্বেষ তো প্রকাশ করলেনই না, বরং বললেন, ‘তিনি (মুগাবে) জিম্বাবুয়েকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। যা হওয়ার হয়ে গেছে, সব ভুলে যান। আমরা আবার নতুন করে সব শুরু করবো।’
নানগাগওয়া তার বক্তব্যে আরো বলেন, যেহেতু আমরা এখন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মন দেব সেহেতু আমাদের আর অতীতের অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই। সব রকম বিশৃঙ্খলা মিটিয়ে আমরা এখন সুষ্ঠুভাবে দেশ চালানোর কথা ভাববো। তবে সমস্ত রকম দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের সচেষ্ট হবে এবং আমরা অবশ্যই সবরকম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করে দেখবো। জনগণের সম্পদ জনগণকে ফেরত দেব।
নানগাগওয়া এ যাত্রাকে দেশের দ্বিতীয় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করলেন। ১৯৮০ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর নানা ভুলভ্রান্তিতের এতোদিন গত হয়েছে। এখন আর সেদিনে ফিরে তাকানোরও সময় নেই। সব ভুলে নানগাগওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে চাচ্ছেন কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়েছে, দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা প্রায় ভঙ্গুর, সেখান থেকে উত্তরনের জন্য অতি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। নানগাগওয়াও তাই চান।
১৯৮০ সালে স্বাধীনতার পর থেকে রবার্ট মুগাবে প্রায় ৩৭ বছর ধরে দেশটির সর্বোচ্চ ক্ষমতা আকড়ে ধরে রেখেছিলেন। যথা সময়ে নির্বাচন দিলে, ক্ষমতা কুক্ষিত করে না রাখলে, দুুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলে তিনি সারা জীবনের জন্যই দেশের সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হয়ে থাকতে পারতেন। ৯৩ বছর বয়স্ক এ নেতা নিজের স্ত্রীকেই নিজের দায়িত্বে বসাতে চেয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত যথার্থ ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়ে সপ্তাহব্যাপী চলমান সহিংসতা ও রাজনৈতিকর অস্থিরতার সমাপ্তি ঘটলো জিম্বাবুয়ে। জনগণ নেচেগেয়ে উল্লাশ প্রকাশ করে নতুন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়েছে। শপথ অনুষ্ঠানে হারারে জাতীয় অনুষ্ঠানে লক্ষাধিক জনগণের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুজাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ফিলিপ নাইওসি, জাম্বিয়ান প্রেসিডেন্ট এডগার লুঙ্গু এবং জাম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কেনিথ কুন্ডা। শপথ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জিম্বাবুয়ে ব্রিটেনের উপনিবেশ থাকার সময়কার ব্রিটিশ আফ্রিকান মন্ত্রী রয় স্টুয়ার্ট। সিএনএন, ফ্রান্স ২৪