ইয়াবা পাচারে নিত্যনতুন কৌশল বেকায়দায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী!
বিপ্লব বিশ্বাস : আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ইয়াবা জব্দ করছে। আর এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাচারকারীদের চমক! নিত্যনতুন কৌশলে দেশজুড়ে ইয়াবা সরবরাহ করছেন তারা। কখনো শরীরের গোপনস্থান, তো কখনো পাকস্থলি। কখনো ফল-সবজির আড়াল, কখনো দুধের কৌটা কিংবা জুতার সুকতলা কৌশলের যেন শেষ নেই।
পুলিশ বলছে, সংঘবদ্ধ ইয়াবা পাচারকারী চক্র তাদের কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। ২-১টি ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যান কিনে তারা নিজেদের পরিবহন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। সেই পরিবহনে তারা সাধারণত পচনশীল দ্রব্য পরিবহন করছে। মূলত পণ্য পরিবহনের মতো করে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ইয়াবা চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এতো ঝুঁকি নিয়ে তারা কেন এরকম অপরাধ করে? ইয়াবা পাচারে ধরা খেলে সরকার কঠোর আইন করেছে জেনেও তারা ইয়াবা পাচার করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা বহনকারীদের দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। শরীরে তল্লাশি করেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ইয়াবা বহনের অভিনব কৌশল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে। তিনি আরও জানান, সহজে যাতে খুঁজে না পাওয়া যায় সেজন্য এখন পুরুষের পাশাপাশি নারী মাদক পাচারকারীরা অভিনব কৌশলে ইয়াবা বহন করছেন। ইয়াবা বহনের এত কৌশল রীতিমতো বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে পুলিশকে।
গত বছরের ৭ জানুয়ারি পেটে পুরে ২ হাজার ইয়াবার চালান পাচার করতে গিয়ে মোশতাক আহমদ নামে একজনের মৃত্যু হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পেট থেকে ইয়াবা বের করা হয়। একই বছরের ১০ জানুয়ারি পায়ুপথে নিয়ে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে বাঘাইয়া নামে একজন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। অবশ্য পেটের ব্যথার কারণে তিনি মারা যান। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে বাঘাইয়ার পেট থেকে ১ হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়।
গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ থেকে ইয়াবা পাচারকারী ২ নারী ৮৫০টি ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় পৌঁছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। রাজধানী মতিঝিল এলাকার শতাব্দী টাওয়ারের সামনে থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। ওই ইয়াবা কলার ভেতর করে খেয়ে তারা ঢাকায় আসছিল। পরে হাসপাতালে নিয়ে পায়খানা করার সময় ওই ইয়াবা বের হয়ে আসে। গত বছরের ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গভীর সমুদ্র বন্দর থেকে পাঁচ লাখ ইয়াবাসহ ৭ জনকে আটক করে র্যাব। তারা বিশেষ কায়দায় ট্রলারের ভেতর ইয়াবাগুলো লুকিয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে আসছিল।
গত ১৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কর্ণফুলী এলাকার মইজ্যারটেক থেকে দেশ ট্রাভেলস পরিবহনে তল্লাশি করে কাঠের চেয়ারে বক্স তৈরি করে পাচারের সময় ২৫ হাজার ইয়াবাসহ ২ জনকে আটক করা হয়। আটক ২ জনের মধ্য ১ জন নারী। এ ছাড়া গত ১৮ নভেম্বর শনিবার রাতে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া চেকপোস্ট থেকে এক নারীকে আটক করে পুলিশ। তার কাছে থাকা একটি পরিপক্ব ঝুনা নারিকেলের ভেতরে কৌশলে লুকিয়ে রাখা এক হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়। এ ছাড়াও কাঁচা সুপারি, বইয়ের ভেতর, চশমার বাক্সের ভেতর, জিআই পাইপের ভেতর, পুরুষের মলদ্বার ও নারীর শরীর থেকে ইয়াবা উদ্ধার করছে পুলিশ। আবার সন্দেহ না করার জন্য সাংবাদিক থেকে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ইয়াবা পাচারে আনছে নতুন কৌশল। বেছে নিচ্ছে নতুন নতুন পাচারের রুটও। এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর লালপুর এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে বিশেষ কায়দায় লুকানো ৭ লাখ ইয়াবাসহ দুইজন আটক করা হয়। সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর নগরীর বাকুলিয়া থানার শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন চাক্তাই মেরিনার্স রোডের মুখে মাছ বোঝাই একটি কাভার্ডভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে এক লাখ ২০ হাজার ইয়াবা জব্দ করে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় ৩ জনকে আটক করে পুলিশ। সম্পাদনা : তরিকুল ইসলাম সুমন