রাশিয়ায় সরকারি কর্মকা-ে দুর্নীতিতে ক্ষতি ২ লাখ কোটি রুবল!
শিমুল জাবালী: জমজমাট রড়াই হচ্ছে বিশ্বকাপে। রুশসহ সারাবিশ্ব সেই লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন। কিন্তু এর আড়ালে ক্রেমলিনের চিত্র কি? কোনো কি পরিবর্তন এসেছে সেখানে? দেশটির ১১ নগরীতে হচ্ছে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো। সব জায়গায়ই এক উৎসবের পরিবেশ। রাত বা দিন নেই। সারাক্ষণ রাস্তায় মানুষ আর মানুষ। রাশিয়ার ভক্ত বা উৎসাহী ব্যক্তিরা ভোদকায় চুমুক মেরে বুঁদ হয়ে পড়ে থাকছেন। সেখানে পক্ষ-বিপক্ষ নেই। সবাই এক ভোদকায় মজেছেন। সারানস্ক এলাকার অধিবাসীরা জাপান, কলম্বো বা তিউনিশিয়ার অতিথিদের বরণ করছেন। এসব অতিথির এখানে কখনো যাওয়ার কোনো কারণ ছিল না। রাস্তায় রাস্তায় সাদা পোশাকে মুখে হাসি নিয়ে দাঁড়ানো পুলিশ। তারা ন¤্রতার সঙ্গে পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন পর্যটকদের। নাগরিকরা উল্লাস করছেন, তারা তা দেখছেন। অথচ দু’এক মাস আগেও এখানকার চিত্র ছিল আলাদা। পুলিশের হাতে ছিল বন্দুকের বাঁট। বিক্ষোভকারীদের ওপর তা প্রয়োগ করছিল। কিন্তু সেই চিত্র এখন নেই। ঠিক এই মুহূর্তে রাশিয়াজুড়ে পার্টিটাইম। সেখানে মদ পান থেকে সেক্স সব কিছুই অনুমোদিত। কেউ কাউকে কিছুতে বাধা দিচ্ছে না। রাশিয়ার এই উৎসবমুখর পরিবেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে খবরের সম্প্রচার মাধ্যমগুলো নেতিবাচক খবর এড়িয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মিডিয়াতে এর ধারেকাছেও যাচ্ছে না। এর বাইরে যেসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আছে, ধরা যাক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কথা। তারা সরকারি নির্দেশনা জারি করেছে আঞ্চলিক সব মিডিয়াকে যাতে তারা অপরাধ নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ না করে। দেশ যখন উৎসব মুখর তখন সরকার সঙ্গোপনে তার রাজনৈতিক কৌশল হাসিল করে নিচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা একটি নীতি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা হলো সেখানে অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়ানো হচ্ছে। নারীদের জন্য পেনশনের বয়স ছিল ৫৫ বছর। কিন্তু তা বাড়িয়ে এখন ৬৩ বছর করা হচ্ছে। আগে পুরুষদের জন্য এ বয়স ছিল ৬০ বছর। এখন তা করা হচ্ছে ৬৫। রাশিয়ার ৮৩টি অঞ্চলের মধ্যে ৫১ টি অঞ্চল আছে, যেখানে পুরুষদের আয়ুষ্কাল ৬৫ বছরের নিচে। ফলে এই সংস্কার কার্যকর হওয়ার পর গড়পরতায় কোনো নাগরিক অবসরে যাওয়ার বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকতে নাও পারেন। প্রেসিডেন্ট পুতিন অবশ্যই জানেন যে, পেনশনের এই বয়সসীমা নির্ধারণ ভীষণ অজনপ্রিয়। তিনি ২০০৫ সালে একবার কথা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি এমন সিদ্ধান্ত কখনোই নেবেন না। কিন্তু সেই ঘটনাই ঘটতে যাচ্ছে। রাশিয়ার অর্থনীতি ভাল যাচ্ছে না। অনেক অর্থের প্রয়োজন সরকারের। তাই সরকার আশা করছে, পেনশনের বয়সসীমা বাড়ানো হলে তাতে কয়েক হাজার কোটি রুবল সাশ্রয় হবে। এর এই উদ্যোগ শুরু হবে ২০২৪ সাল থেকে। দেশটিতে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে। দেখা দিয়েছে দুর্নীতি। সব সঙ্কট মিলে জীবন ধারণের মান নেমে যাচ্ছে। সেখানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের সংখ্যা এখন ২ কোটি ২০ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৫ ভাগ। আবার বিলিয়নিয়ারের সংখ্যাও বেড়েছে। আগে এ সংখ্যা ছিল ৯৬ জন। এখন তাদের সংখ্যা ১০৬। তাদের সম্পদের পরিমাণ ৪৬০০০ কোটি থেকে ৪৮৫০০ কোটি ডলার পর্যন্ত। নতুন পেনশন নীতি কার্যকর হলে তাতে বছরে হয়তো এক এক লাখ কোটি রুবল সাশ্রয় হবে। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে সরকারি কর্মকান্ডে দুর্নীতির চর্চা থাকায় গচ্চা যাচ্ছে ২ লাখ কোটি রুবল। এই দুর্নীতি বিরোধী কোনো পরিকল্পনা সংস্কার করা হয় নি। এ নিয়ে বিরোধী দল ও ট্রেড ইউনিয়নগুলো এরই মধ্যে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি।