‘সাধারণ মানুষের কাছে ঋণ আদায়ে সরকার খড়গহস্ত হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেলায় করছে না’
আশিক রহমান: সাধারণ মানুষের কাছে কর বা ঋণ পাওনা থাকলে তা আদায়ে সরকার খড়গহস্ত হয় কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে তা করছে নাÑ এমন অভিযোগ করে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ শোধ করছে না, কর-ও দিচ্ছে না। লাভের অংশ দেয় না। সরকার বারবার সিদ্ধান্ত নেয় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার জন্য, কিন্তু তা বাস্তব হচ্ছে না। কেন বাস্তব হতে না? কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় তাহলে শেয়ারবাজার অনেক স্থিতিশীল হতো। কারণ তখন কর্তাদের জবাদিহিতার মধ্যে আসতে হতো, পাবলিকের কাছে হিসাব দিতেই হতো।
তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সময় থেকে আমরা অনেক মিটিং করেছি যেন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজারে আসে। কিন্তু আসছে না। প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজারে গেলে তো অনারিয়াম, খানাদানা, বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নেওয়া বা পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। অথবা অনৈতিক সুবিধা নিতে পারবে না বলেই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করছে না কর্তৃপক্ষ।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ২০১৭-১৮ সালের বাজেট বিশ্লেষণে আমরা দেখিয়েছিলাম যে, সরকার বাজেটে আয় করে তার গ্রোথ দেখাচ্ছে ৩৫-৩৬ শতাংশ। কিন্তু সরকার তার নিজের প্রতিষ্ঠানগুলোর বেলায় গ্রোথ দেখায় ১০-১১ শতাংশ। গ্রোথ দেখানোর মানেটা প্রতিষ্ঠানগুলো যে লাভ করছে তা সরকারকে দিচ্ছে না। একইসঙ্গে যে ঋণ তারা নিয়েছে তাও শোধ করছে না। পাবলিকের কাছ থেকে কর নেয় প্রতিষ্ঠানগুলো, তাও দিচ্ছে না। যদি দিত তাহলে সরকারের কর অনুপাত আরও অনেক উপরে উঠে যেত। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই বড় ডিফল্টার। প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ পরিশোধের কথা না বলে তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত সরকার বাইরে থেকে ঋণ এনে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটা সাবসিডিয়ারি লোন এগ্রিমেন্টের অধীনে দেয় যে, তোমরা কমার্শিয়ালি এই টাকা খরচ করবা। একইসঙ্গে ১-২ শতাংশ সুদে টাকা শোধ করবা। বিপিসি, বিসিআইসি বা বিডব্লিউডি কিন্তু সরাসরি লোন নিতে পারে না, সরকারই এনে দেয়। কিন্তু দেখা যায় যে, সরকার তাদেরকে লোনের ব্যবস্থা করে শোধ করার কথা বললেও আসল ও সুদ কোনোটাই শোধ করে না! কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান হচ্ছেন সচিবরা নিজেই। তারা নিজেই নিজের লোনের কথা বলবেন কী করে! তারা মনে করে, না দিতে পারলে ভালো! আমি চেয়ারম্যান আছি, অনারিয়াম পাচ্ছি। প্রতিষ্ঠান কী পাচ্ছে, না পাচ্ছে এটা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয় বলে মনে হয় না।