ভারতের প্রভাব সত্ত্বেও চীনের ভূ-অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রতি ঝুঁকছে বাংলাদেশ
মাছুম বিল্লাহ: ভারত অর্থনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত প্রভাব বিস্তার করলেও চীনের ভূ-অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রতি ক্রমেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রধান শক্তি চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এরপরও চীনের ভূ-অর্থনীতির প্রতি ধীরে ধীরে ঝুঁকছে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও ভুটান।
ভারতের মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোর সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয়তে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সম্প্রতি চীনের কিংদাওয়ে অনুষ্ঠিত সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের যৌথ ঘোষণায় অন্য সাতটি সদস্য দেশ ‘চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডোর’ (সিপিইসি) এবং চীনের অঞ্চল ও সড়ক উদ্যোগ (বিআরআই) অনুমোদন করলেও ভারত তা করেনি। স্পষ্টত বিষয়টি এসসিও জোটের মধ্যেই ভারতের জন্য একটি অর্থনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত বিচ্ছিন্নতা তৈরি করেছে এবং জোটের জন্যও তা স্বস্তিকর নয়। তবে সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা অনুমোদন করে ভারত। চলতি বছরের শেষ দিকে ‘পিস মিশন ২০১৮’ নামে এসসিও’র সন্ত্রাসদমন সামরিক মহড়াতে পাকিস্তান ও ভারত একসঙ্গে অংশ নেবে বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর মানে হলো ভারত এসসিও-তে সিপিইসি’র বিরোধিতা করলেও ‘পিস মিশন ২০১৮’ সমর্থন করে। চীনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলতে হয়, এসসিও হলো সম-সহযোগিতার মাধ্যমে নিরাপত্তা সমস্যাগুলো সমাধান করা এবং এটি চীন বা রাশিয়ার ভূ-কৌশলগত স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়।
ভারত বলছে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরের মধ্য দিয়ে যাওয়া সিপিইসি তার ভৌগলিক অখ-তা নষ্ট করেছে। আর চীন বলেছে যে সে সবদেশের ভৌগলিক অখ-তাকে সম্মান করে। তবে কাশ্মির ইস্যুটি একান্তভাবেই পাকিস্তান ও ভারতের সমস্যা। এই সমস্যা দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে তাদেরকেই নিরসন করতে হবে।
এটা ঠিক আঞ্চলিক উত্তেজনা এবং পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে প্রক্সি সংঘাত এসসিও দেশগুলোর মধ্যে এবং এর বাইরে ব্যাপকভিত্তিক কানেকটিভিটিকে ব্যাহত করছে। এই অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ‘চীন ঠেকাও নীতি’র সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র তার আধিপত্যবাদ টিকিয়ে রাখতে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং চীনের প্রভাব বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে চায়।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে চীন। এর উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও নেপালের কথা বলা যায়। এসব দেশে চীনের সহায়তায় দ্রুত অবকাঠামো গড়ে উঠছে। বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও ভুটান দুই আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলার চেষ্টা করছে। যদিও চীনের ভূ-অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রতি তারা ক্রমেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।
চীন যদি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আরো সমৃদ্ধি বয়ে আনে তাহলে নয়া দিল্লি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দেখতে পাবে। যেসব স্যাটেলাইট স্টেট এখনো ভারতকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে সেগুলো উপযুক্ত সময়ে চীনের কক্ষপথে ঢুকে পড়তে পারে। তবে চীন ও ভারতের মধ্যে অনেক ইস্যুতে বিরোধ থাকায় এক কক্ষপথ থেকে অন্য কক্ষপথে যাওয়া দেশগুলোর জন্য সাবলীল হবে না বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।