আইপিএল জুয়ায় যুবকের মৃত্যু মামলা ভিন্নখাতে নেয়ার অভিযোগ
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: আইপিএল জুয়াকে কেন্দ্র করে যুবকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে নোংরা রাজনীতি চলছে। মূল ঘটনাকে আড়াল করে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা মামলার আসামী করা হয়েছে। এর নেপথ্যে কাজ করছে ওই এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা। হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ, গ্রেপ্তার হওয়া আসামীদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি, পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, গত ২৪ মে রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া নগর এলাকায় আইপিএলের বাজির টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে রুবেল মিয়া হত্যাকা- ঘটে। এ জুয়ার টাকা নিয়ে রুবেলের আপন বড় ভাই মোমেন মিয়ার সঙ্গে সুরুজ, নয়ন ও কাজল নামে তিন ব্যক্তির কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এ সময় রুবেল মিয়া তার বড় ভাইকে বাঁচাতে এলে নয়নের ছুরির আঘাতে রুবেল মারাত্মক আহত হয়। এ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার দিন ও পরদিন প্রত্যক্ষদর্শীরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে জুয়ার টাকা নিয়ে মারামারি ও ছুরিকাঘাতে রুবেলের মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরেন। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও গণমাধ্যমের কাছে হত্যার কারণ হিসেবে একই ঘটনা তুলে ধরেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে সংবাদও প্রচারিত হয়।
কিন্তু দু’দিন না যেতেই একটি মহল এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত হয়। এই মহলের প্ররোচনায় প্রকৃত হত্যাকারীদের পাশাপাশি হত্যা মামলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আওয়ামী লীগ কর্মীদের আসামী করা হয়। এতে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রধান আসামী করা হয় তোফায়েল আহম্মেদ আলমাসকে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, হত্যাকা-টি ঘটেছে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার। আলমাছ চেয়ারম্যান নিজে তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে রুবেলের মাথার পেছনে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান আলমাছের মোবাইল ফোনের কললিস্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঘটনার সময় তিনি রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে ছিলেন। সেখানে মাগরিবের নামাজ শেষে তারাবি নামাজ পরার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কললিস্ট অনুযায়ী পৌণে আটটায় তিনি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকায় ছিলেন।
আলমাছ চেয়ারম্যান জানান, ইফতার অনুষ্ঠানে থেকে ঢাকার বাসায় ফেরার পথে তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হত্যাকা-ের খবর জানতে পারেন। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বিষয়টি রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং দুজন ইউপি সদস্যকে জানান এবং তাদেরকে ঘটনাস্থলে যেতে বলেন।
ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারন ডায়েরি করা হয়। এতে হত্যাকা-ের কারণ হিসেবে আইপিএলের জুয়া নিয়ে বিরোধের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়।
হত্যা মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী নিহত রুবেলের আপন দুই চাচাতো ভাই আদালতে দেয়া হলফনামায় উল্লেখ করেন, আইপিএলে জুয়াকে কেন্দ্র করে সুরুজ, নযন্ও কাজল এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে। ঘটনার সময় অন্য কেউ উপস্থিত ছিল না।
এদিকে আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে মামলার অন্যতম আসামী সুরুজ মিয়া বলেছেন, আইপিএলে জুয়ায় জেতা দশ হাজার টাকা চাইতে গিয়ে মোমেন ও রুবেলের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে নয়ন রুবেলকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এতে তার মৃত্যু হয়। জবানবন্দিতে সুরুজ আরো বলেন, নিহত রুবেল ও তার ভাই মামলার বাদী মোমেনের সঙ্গে রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুইয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।