সাড়ে ৯ লাখ কোটি রুপির খেলাপি ঋণ আদায়ে ভারতের পরিকল্পনা
নূর মাজিদ: ভারতের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে খেলাপি ঋণের আনুষ্ঠানিক পরিমাণ সাড়ে ৯ লাখ কোটি রুপি। এই বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ থেকে মুক্ত করে দেশের ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দূর করতে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার। বিশেষত, চলতি জুন মাসের শুরুর দিকেই দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন অর্থমন্ত্রী পিয়ুশ গোয়াল এই সমস্যা সমাধানে সরকারের বহুবিধ পরিকল্পনার কথা জানান।
ভারতীয় অন্তঃবর্তীকালীন অর্থমন্ত্রী পিয়ুশ গোয়াল খেলাপি ঋণ সমস্যা সমাধানে যে সমস্ত পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো একটি ‘খেলাপি ঋণ ব্যাংক’ বা তহবিল প্রতিষ্ঠা। এই খেলাপি ঋণের রাস্ট্রায়াত্বকরণের নাম দেয়া হয়েছে এআরসি পরিকল্পনা। এআরসি’র আওতায় আনুষ্ঠানিক সাড়ে ৯ লাখ কোটি রুপির খেলাপি ঋণের দায় রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো নেবে। সরকারের আশা এর ফলে দেনাগ্রস্থ ব্যাংকগুলি নতুন করে (দেনা-বিহীন) তাদের হিসাব খুলতে সক্ষম হবে।
তবে ভারতীয় অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নন। তাদের সিংহভাগই মনে করেন এই সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যাংকিংখাতের সংকট দূর করতে খুব সামান্য ভূমিকাই রাখতে পারবে। বিশেষত যখন খেলাপি ঋণ আদায়ের সঙ্গে ভারতের দুর্বল বিচার ব্যবস্থার বিষয়টিও জড়িত রয়েছে।
ভারতীয় অর্থনীতিবিদ ও এশিয়ান ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ক্রেডিটসাইটের উপ-পরিচালক ইসমাইল পিলি জানান, “সরকারের এআরসি পরিকল্পনা প্রস্তাব খুবই ভালো কিন্তু এর ফলে ভারত আরেকটি ফিলিপাইনে পরিণত হতে পারে। সেখানে সরকারি ব্যাংকিং খাত বিগত ২০ বছর ধরে রাস্ট্রায়াত্ব দেনার বোঝা টেনে চলেছে এবং তা দেশটির বাজেট ঘাটতির প্রধানতম কারণ।”
এসময় তিনি আরো বলেন সরকারের পরিকল্পনা ব্যর্থ হবার অন্যতম আরকটি কারণ ভারতীয় বিচার-ব্যবস্থা। এখানে বিদ্যমান আইন কোম্পানিগুলোকে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করবার বিপক্ষে বাঁধা হিসেবে কাজ করে। ফলে তারা ঋণ নিয়ে ব্যবসায় চালিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ হয় এবং পরবর্তীতে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়।
দেশটির ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, এআরসি’র চাইতেও বেশী কার্যকর হতে পারে ব্যাংকগুলিতে নতুন মূলধন সরবরাহের প্রক্রিয়া। চলতি বছরের শুরুতেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেনাগ্রস্থ সরকারি ব্যাংকগুলোতে ১৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেবার ঘোষণা দেন। যদিও সরকারি দেনাগ্রস্থ ব্যাংকগুলির আসলে ২০-৫০ বিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ প্রয়োজন ছিলো। প্রস্তাবিত ১৪ বিলিয়ন ডলার আসবে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের পকেট থেকে। তারা এই সমস্ত দেনা সরকারের কাছে থেকে কিনে নেবেন।
ভারতের অপর অর্থনীতিবিদ প্রতীক খাওয়ার এর বরাত দিয়ে সিএনবিসি জানায়, শুধু বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের ওপর নির্ভর করে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি খাতের খেলাপি ঋণের সঙ্কট মেটানো সম্ভব নয়। এই জন্য সরকারকে নিজের কোষাগারের দরজাকেই উন্মুক্ত করতে হবে। সিএনবিসি/ ইকনোমিক টাইমস