তুরস্কের নির্বাচনে এরদোগানের বিপুল বিজয়
সান্দ্রা নন্দিনী: তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান। রোববার তুমুল উত্তেজনার এ নির্বাচনে জয়লাভ করে এরদোগান ও তার দল একে পার্টি নেতৃত্বাধীন জোট পিপলস অ্যালায়েন্স। রোববার একইদিন অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী এককভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়েছে এরদোগানের দল।
দেশটির নির্বাচন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এরদোগান নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, যে ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে সেখানে এরদোগান ৫৩ শতাংশ ভোট এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মুহাররম ইনসে পেয়েছেন ৩১ শতাংশ ভোট। তুরস্কের সরকারি সংবাদ সংস্থা আনাদলু জানায়, ৯৯% ভোট গণনা শেষে সরকার গঠনে এগিয়ে আছে এরদোগানের জোট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও দেখা গেছে এরদোগানের সুনিশ্চিত জয়। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে এরদোগান এগিয়ে আছেন ৫৩% ভোটে। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এরদোগানের প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান পিপলস পার্টির মুহাররেম ইনসি পেয়েছেন ৩১% ভোট। এ নির্বাচনের পর এরদোগান নতুন সংবিধান অনুযায়ী দেশ শাসন করবেন। নতুন সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর পদ বাতিল করা হবে এবং প্রেসিডেন্ট হবেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে এরদোগান মন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্টসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি নিয়োগ দিতে পারবেন। একই সাথে তিনি দেশের আইনি ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করা ও জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা পাবেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় এরদোগানের বিরুদ্ধে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ মুহাররম অভিযোগ করেন যে তিনি কর্তৃত্ববাদী শাসন চালাচ্ছেন।
এবারের তুরস্কের নির্বাচন মূলত দুটি জোটে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি পিপলস অ্যালায়েন্স। এখানে আছে এরদোগানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি ও গ্রেট ইউনিটি পার্টি। অপরটি ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স। এছাড়া চারটি দল আছে- শক্তিশালী রিপাবলিকান পিপলস পার্টি, ফ্যালিসিটি পার্টি, আই পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টি।
অন্যদিকে, প্রথমে পরাজয় মেনে না নিলেও পরবর্তীতে গণতন্ত্রের স্বার্থে মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটির প্রধান বিরোধীদল।
স্থানীয় সময় গতকাল ভোর ৩টার পরে রাজধানী আঙ্কারায় নিজদল একে পার্টির প্রধান কার্যালয়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিজয় পতাকা হাতে নিয়ে এরদোগান বলেন, ‘জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রতি পূরণে আগামীকাল থেকেই আমাদের কাজে নেমে পড়তে হবে।’ এর পাশাপাশি দুইবছর আগে হওয়া সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করায় কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এরদোগান। আগামীতে সকল জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরও কঠোর হওয়ার কথাও জানান তিনি।
এরদোগান বলেছেন, তাঁর দল এ কে পার্টি পার্লামেন্টেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘পুরো বিশ্বকে গণতন্ত্রের শিক্ষা দিয়েছে তুরস্ক।’ এরদোগান বলেছেন, ‘আমি আশা করি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কেউ নেতিবাচক কিছু করার চেষ্টা করবে না।’
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদুলু জানিয়েছে, পার্লামেন্ট নির্বাচনে যে ৯৬ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে সেখানে এরদোগানের একে পার্টি পেয়েছে ৪২ শতাংশ ভোট এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সিএইচপি পেয়েছে ২৩ শতাংশ ভোট।
এরদোগানের দল একে পার্টির মূল ভিত্তি হচ্ছে ইসলাম। অন্যদিকে, মহাররমের দল মধ্য-বামপন্থী। তুরস্কের নির্বাচনে প্রধান ইস্যু ছিল দেশটির অর্থনীতি। তুরস্কের মুদ্রা লিরার ব্যাপক দরপতন হয়েছে এবং দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ শতাংশে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল সন্ত্রাসবাদ। কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট গ্রুপের হুমকি মোকাবেলা করাও তুরস্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সংবাদদাতারা বলছেন, শেষ পর্যন্ত ভোটাররা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়েছিলেন। একটি হচ্ছে কুর্দি এবং জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে বিভক্তি এবং অপরটি হচ্ছে ধর্মীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির মাঝে বিভক্তি।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের একটি ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে তুরস্কে জরুরি অবস্থা চলছে। চলমান নির্বাচনটি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এরদোগান তা এগিয়ে নিয়ে আসেন। রয়টার্স, বিবিসি