সাবেক সেনা প্রধানকে সংবর্ধনা সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন আজিজ আহমেদ
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক এর কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ ১৯৬১ সালে ১ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ১০ জুন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে ৮ম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে আর্টিলারি কোরে কমিশন লাভ করেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার ইন ডিফেন্স ষ্টাডিজ, এমএসসি (কারিগরি) এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে মাষ্টার্স ইন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এক্সিকিউটিভ) ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি বিইউপির অধীনে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য গবেষণারত আছেন। তিনি আর্টিলারি সেন্টার এন্ড স্কুল, হালিশহর থেকে গানারী স্টাফ কোর্স, মিরপুরে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স এবং ভারত থেকে লং গানারী স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। তার বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, বিজিবি’র মহাপরিচালক, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ড ও সেনাসদরের কোয়ার্টার মাষ্টার জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তিনি একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের অধিনায়ক, দুইটি আর্টিলারি ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, একটি বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, একটি বিজিবি সেক্টরের কমান্ডার, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অবজারভার হিসেবে ইরাক-কুয়েত এবং সুদানে ফোর্স কমান্ডারের মিলিটারি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইন্সারজেন্সী অপারেশনের অংশ হিসেবে তিনি দীর্ঘ দুই বছর ২৪ আর্টিলারি ব্রিগেডের অপারেশনাল স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘ সময় আর্টিলারি সেন্টার এন্ড স্কুল হালিশহর এবং স্কুল অব মিলিটারি ইন্টিলিজেন্স-এ একজন সফল প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিজিবি সেক্টর কমান্ডার হিসেবে অধীনস্ত সেক্টরের পুনর্গঠন ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিজিবিএম পদকে ভূষিত করা হয়। বিজিবি মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিজিবি’র পুনর্গঠন ও উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর স্বীকৃতিস্বরুপ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পিজিবিএম পদকে ভূষিত করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ এ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত আছেন। পেশাগতভাবে ঈর্ষনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অধিকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে ‘ট্রেনিং নোট অন ফায়ার প্লান’ এবং ‘অপারেশন কার্ড ফিল্ড আর্টিলারি’প্রকাশ করেন যা আর্টিলারি রেজিমেন্টের সকল পর্যায়ের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান দুইটি প্রকাশনা হিসেবে সমাদৃত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ও তিন পুত্র সন্তানের পিতা। তার দ্বিতীয় ছেলে বর্তমানে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ৭৬তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে প্রশিক্ষণরত রয়েছেন।
এদিকে বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক এর বিদায়ী সংবর্ধনা সোমবার ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তরের পর সেনাবাহিনীর উর্র্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সকল পদবির সদস্যের উপস্থিতিতে বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধানকে সামরিক রীতিতে বিদায় জানানো হয়।
এর আগে তিনি শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর সেনাকুঞ্জে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। দায়িত্বভার হস্তান্তরের আগে সেনাবাহিনী প্রধান গত ২৪ জুন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাত করেন।