বিশেষ অভিযানে বিনা অপরাধে গ্রেফতারের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা

    নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : একের পর এক লাগাতার টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনায় সরকার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বিশেষ অভিযান চালায়। অভিযানে বিনা অপরাধে, বিনা ওয়ারেন্টে ও রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকগুলো ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অভিযোগ এসেছে। এই সব অভিযোগ তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই সব অভিযোগের তদন্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়ার চিন্তা করছে। বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ওইসব ঘটনায় পুলিশ বাণিজ্য করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অনেকদিন ধরে অনেক ওয়ারেন্ট তামিল করা হয়নি। এই কারণে অনেক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া সন্ত্রাসী, মলম ও অজ্ঞানপার্টির সদস্যও গ্রেফতারের বাইরে ছিল। এবার অভিযানে ওই অপরাধীদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। এই কারণে গ্রেফতার হওয়া আসামির সংখ্যা বেশি। এই অভিযান নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও মন্ত্রী মনে করছেন এই অভিযান সফল। এই সাফল্যের মধ্যে কিছু কিছু ছোটখাটো যেসব অভিযোগ এসেছে, ওইসব অভিযোগের তদন্ত করা হবে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের জন্য সপ্তাহব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। আর এই অভিযোগে প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এই সংখ্যা কিছুটা বেশি হতে পারে বলে জানা গেছে। কারণ শেষ দু’দিনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য মিলেনি। যদিও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একজন কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, অভিযানে ১৪৫৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৪ জন জঙ্গি। এটাতে তারা বড় ধরনের সাফল্য হিসাবেই বিবেচনা করছে।
    সূত্র জানায়, এই অভিযানে লক্ষ্য ছিল জঙ্গিদের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করার। টার্গেট কিলিং বন্ধ করার। কিন্তু সেই রকম কোনো নেতাকে গ্রেফতার করার। সেই রকম কোনো অপরাধীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি গত দেড় বছরে প্রায় ৫৪টি টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। ওইসব ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ও কারা এর ইন্ধানদাতা এমন অপরাধীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এই কারণে এই অভিযান নানাভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
    বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অভিযান পুরোপুরি সফল না হওয়ার পেছনে আগাম অভিযানের ঘোষণা দেওয়াতে প্রকৃত অপরাধীরা অনেকেই আত্মগোপন করার সুযোগ পেয়েছেন। এটা আগে হয়নি। আবার এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সবাইকে আদালতে উপস্থিত করে তাদেরকে কারাগারেও পাঠানো হয়নি। অনেক আসামি ধরার পর পর সবাইকে আদালতে হাজির করা হয়নি। অনেকে থানা ও পুলিশের হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এতে পুলিশ বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
    বিএনপির অভিযোগ, অনেককে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা করার কারণে পুলিশ বাণিজ্য করার সুযোগ পেয়েছে। পুলিশকে সরকার এই গণগ্রেফতারের সুযোগ করে বোনাস দিয়েছে। তারা সুবিধা পেয়েছে। আর সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয়েছে। এভাবে অভিযান না করে আরও পরিকল্পিতভাবে প্রকৃত অপরাধী, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালনার প্রয়োজন আছে মনে করে বিএনপির নেতারা। তবে বাণিজ্যের জন্য অভিযান তারা সমর্থন করে না। পুলিশ এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করছে। পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে- এই সব অভিযোগ সত্য নয়। কোনো বাণিজ্য হয়নি। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *