শোলাকিয়া থেকে নিস, হাসির হাটে আর্তনাদ

    প্রতিটি জাতি ধর্ম ও বর্ণের মানুষের জন্য বিশেষ বিশেষ কিছু আনন্দের মুহূর্ত ও দিন থাকে। বাঙালিরাও তার থেকে আলাদা নয়। আমাদের বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে দুইটি দিন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য একটি হলো ঈদুল ফিতর আর একটি ঈদুল আযহা। শোলাকিয়ার সঙ্গে দেশের মুসলমানদের একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে এই সম্পর্কটাই হলো ঈদ কেন্দ্রিক। মুসলমানদের জন্য ঈদই হলো আনন্দ আর এই ঈদ আনন্দের শুরুটাই হয় ঈদের নামাজ দিয়ে। দেশে যতগুলো ঈদের জামাত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বড় জামায়াত হয়, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার শোলাকিয়ায়। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঈদ উৎসবের অংশ হিসেবে শোলাকিয়ায় আসেন। শোলাকিয়ার ঈদের জামায়াত ১৮৮ বছর পার করলেও পূর্বে কোনো অঘটন ঘটেনি শোলাকিয়ায়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, অবশেষে ধর্মীয় উগ্রবাদের কালো থাবা ক্ষমা করেনি মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদকে। শোলাকিয়ার মাটি রঞ্জিত হয়েছে সাধারণ মানুষের রক্তে। ঈদের সব আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে জঙ্গিদের বুলেট আর চাপাতির আঘাতে। ঈদের আনন্দের পরিবর্তে শোলাকিয়ার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে গেছেÑ নিহতের স্বজনদের আহাজারি আর আহতদের আর্তনাদে। মুহূর্তেই জীবন দিতে হলো, দুজন পুলিশসহ চারজন নিরীহ মানুষকে। তার মাত্র সপ্তাহখানেক আগে জঙ্গিদের আরও এক ঘৃণ্য হামলায় রাজধানীর গুলশানে বিদেশি নাগরিকসহ জীবন দিতে হয়েছে ২৮ জন সাধারণ মানুষকে।

    ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় বাস্তিলদুর্গের পতনের বার্ষিকী হিসেবে প্রতিবছর ১৪ জুলাই জাতীয় দিবস পালন করে ফ্রান্স। বাস্তিল দিবস উদ্যাপন করতে ফ্রান্সের বহু লোক দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় নিস শহরে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী বিখ্যাত প্রমেনেদ দেজাঙ্গলে চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন আতশবাজির উৎসবে এসেছিলেন জাতীয় দিবস পালনের উৎসবে। শেষ পর্যন্ত সেই উৎসব আর উৎসব থাকেনি উৎসব পরিণত হয়েছে শোক আর আর্তনাতে মুহূর্তেই ধর্মীয় উগ্রবাদী জঙ্গিদের কোনো এক ট্রাক তুলে দেওয়া হয় উৎসবে আসা নিরীহ মানুষের ওপর। মুসলিম নামধারী কোনো এক ড্রাইভার নিঃসঙ্কোচে হাজারো জনতার ওপর দুই কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে যায় ২৫ টনি একটি ট্রাক। শিশু আবাল বৃদ্ধসহ মুহূর্তেই জীবন দিল ৮৪ জন সাধারণ ফরাসি মানুষ। মাত্র আট মাস আগেই রক্তাক্ত হয়েছিল ফ্রান্স। ইসলামী স্টেট নামধারী জঙ্গিদের হামলায় তখনও জীবন দিতে হয়েছিল ফ্রান্সের ১৩০ জন সাধারণ মানুষকে।

    ফ্রান্স হোক আর বাংলাদেশই হোক আজ আমরা সবাই এক গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্দা। গুলশান ও শোলাকিয়ার ক্ষত এখনও আমাদের ভিতর দগ দগ করছে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি সেই ক্ষত থেকে এরই মাঝে নিস এর হামলা আমাদের মাঝে নতুন আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। আবার কোন ট্রাক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ধর্মীয় উগ্রবাদী তথা জঙ্গিবাদের কালো থাবা এবারের ঈদের আনন্দকে যেমন আর্তনাদে পরিণত করেছে তেমনি ফরাসিবাসীর বাস্তিল উৎসবকেও আর্তনাদে পরিণত করেছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, মানুষ নামধারি শকুনগুলো কেন বারবার আনন্দকে আর্তনাদে পরিণত করছে? কার স্বার্থে কিসের স্বার্থে? এখনই সময় সকল মানবতার শক্তিকে এক হয়ে এ শকুনদের অবশ্যই পরাজিত করতে হবেÑ ভবিষ্যৎ রক্ষায়, মানবতা রক্ষায়।

    লেখক : কলামিস্ট / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *