লাভ তোমাদের লাভ আমাদের লাভ সমাজের

    রণজিৎ বিশ্বাস

    : আপনি মানুষ, মানবতা, মনুষ্যত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের নামে বড় অদ্ভুত ও উদ্ভট সব কথা বলেন। খুব কঠিন ও খুব অপ্রিয়। শুনতে গেলে মাথার প্রবেশদ্বার রুদ্ধ হয়ে যায়। অন্যদের বেলায় কেমন হয়, তারাই জানেন। আমি আপনার কথা ও আপনাকে একেবারেই সইতে পারি না। আপনাকে দেখলেই মাথা আমার ভোঁ-চক্কর দেয়। আপনি বড় দুর্বোধ্য। কালপ্রিট ও ক্রিমিনাল।
    : জানতাম, মাথায় আপনাদের কিছু ঢুকবে না। কারণ, মাথায় আপনাদের কিছু না ঢোকানোর বিলাস আছে।
    : আমি আপনার সঙ্গে সিঙ্গুলারলি কথা বলছি, আপনি প্লুরাল’এ লাফাচ্ছেন কেন! যা বলবার আমাকে বলুন, ‘আপনাদের-আপনাদের’ করবেন না। আমাদেক সবলোক আপনার পাকাধানে মই চাপাইনি, নুনের বস্তাও পানিতে ফেলিনি।
    : সবাই ফেলেননি। তবে অজজাতীয় বুদ্ধিতে বিবেচনায় এবং ঈর্ষায়হিংসায় যারা ফেলেছেন, তারা একেবারে জবরদস্ত কা- করেছেন। ভিটিতে পুকুর দেখার মতো বাস্তুভিটেয় ঘুঘু চরানোর মতো কাজ করতে চেয়েছিলেন। অনেকটা অগ্রসরও হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত পারেননি, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ঢাল হয়ে দাঁড়ানোয়।
    নাম্বার টু, আমার ও আমাদের কথা আপনাদের মাথায় না ঢোকার কথা। সে কখনও ঢুকবে না। মানুষ যখন কোয়ালিটি হারায়, ডিগ্রেইডেড ও ডিমোটেড হয়ে যায়, তার মাথার খোপ খালি হয়ে যায়, বিচারবিবেচনার আঁশগুলো মোটা হয়ে যায় এবং বুদ্ধির নালীগুলো ব্লকড্ হয়ে যায়। এতে আমরা যারা কথা বলি কথা লিখি, তারা মনের আনন্দে হৃদয় উজাড় করতে পারি। প্রতীকী শব্দে বাক্যে বাক্যাংশে ও বর্ণমধ্যের ফাঁকা জায়গায় যে কথাগুলো আমরা বলি, তা আপনাদের মস্তিস্কের আপার-চেম্বারে ঢোকে না। ঢুকলে আপনারা নিজেদের শুধরে নিতে পারতেন। ভয়াবহভাবে শিক্ষাবঞ্চিত ও থকথকে ভেদবুদ্ধির কারণে অন্ধ হয়ে আছেন বলে আমাদের কিছু কল্যাণও হচ্ছে।
    : সে কেমন?
    : সে বড় সিম্পল। ‘এক টাকা বাঁচানো মানে এক টাকা জমানো’র থিওরি। ‘ডলার সেইভড ইজ ইকোয়েল টু ডলার অ্যার্নড’। আপনার একটি ভুল, মানে আমার একটি শুদ্ধ। আপনার একটি গলদ কাজ মানে আমার মনে একটি সুখদ অনুভূতি।
    বাকী রইল ‘আমাদেরÑআপনাদের’ ও ‘উহাদেরÑতাহাদের’ ভোকেবুলারি। আমাদের শান্তি সম্প্রীতি সৌহার্দ্য ও সৌভ্রাতৃত্বের মাঝে বিদ্বেষ ও ভেদবিচারের কাঁটা ঢোকাবার জন্য কারা মানুষের বুকেপিঠে লেবেল সাঁঠানো শুরু করেছিলÑ ‘আমাদের লোক’ ‘আমাদের অফিসার’, ‘তাহাদের লোকÑ তাহাদের অফিসার’, ‘উহাদের লোকÑউহাদের অফিসার’ একবার মনে করে দেখুন।
    এই করে করে কত নিরীহ নির্বিরোধ ও নিরপেক্ষ লোককে ঠকিয়েছেন, তাদের সঙ্গে অবিচার করেছেন ও ন্যায্য পাওনা থেকে তাদের ‘মাহরুম’ করেছেন, কতজনের শাপ-অভিশাপÑবদদোয়া কুড়িয়েছেনÑ একবার ভেবে দেখুন। ভেবে দেখুন, এখন কিসের মূল্য শোধ করছেন।
    আপনাদের শেখানো ‘ইহাদের’ ‘উহাদের’ ও ‘আমাদের তোমাদের’ বিভক্তিবিভাজন, আমরা যারা লেখালেখি বলাবলি ও আঁকাআঁকি করি তাদের জন্য একটা সুবিধা এনে দিয়েছে। এখন আপনাদের ও আপনাদের ক্লাবের নাম ধরে কথা বলতে হয় না। ‘ইহারা’ বললেই মানুষ বোঝে ‘কাহারা’ ‘উহারা’ মানুষের বুঝতে কষ্ট হয় না তাহারা ‘কাহারা’। ব্যাপারটা মন্দ নয়, ভাবতে খুব ইন্টারেস্ট পাই। যেভাবে ভুলেভালে হিংসায় মত্ততায় প্রতিহিংসায় ও সাম্প্রদায়িতায় আপনারা ডুবে আছেন, সেভাবে থাকাটা অভ্যাসে পরিণত করুন। আপনাদেরও লাভ, আমাদেরও লাভ, সমাজেরও লাভ, দেশেরও লাভ। সবার ওপরে লাভ শান্তিপ্রিয় মানুষের। শিক্ষার, রুচির, সততার ও সাধুতার।
    লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাবেক সিনিয়র সচিব
    সম্পাদনা : জব্বার হোসেন

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *