কেন বিড়াল ভালোবাসতেন তিনি

    সাখাওয়াত নয়ন

    প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিয়া মারা গেছেন। নিপাট একজন ভদ্রলোক মানুষ ছিলেন তিনি। তাকে শিরোনাম করে আমার একটা লেখা নিয়ে একসময় আলোড়ন হয়েছিল। লেখাটার শিরোনাম ছিল ‘মনিরুজ্জামান মিয়া বিড়াল ভালোবাসেন’! ঘটনাটা সবার সঙ্গে একটু শেয়ার করি আজ। মনিরুজ্জামান মিয়া যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন সহপাঠিনী এক হিন্দু মেয়ের সঙ্গে তার প্রেম হয়। এক পর্যায়ে তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনাটি ছিল অমুক দিন অমুক সময়ে তারা আলাদা আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনে আসবেন। এরপর তারা অমুক ট্রেনে চড়ে পালাবেন। পরিকল্পনা মতো প্রেমিক মেয়েটি স্টেশনে আগেভাগে চলে এসেছিল। কিন্তু মনিরুজ্জামান মিয়া যে পথে আসেন তার আসতে কিছুটা দেরি হয়। এর মাঝে ট্রেন চলে এসেছে স্টেশনে!

    প্রেমিকা মেয়েটি মনে করে প্রেমিক মনিরুজ্জামান মিয়া তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এরপর ঘটে যায় সেই করুন বিয়োগান্তক ঘটনা! প্রেমিককে ভুল বুঝে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে মেয়েটি। মনিরুজ্জামান মিয়া ছুটতে ছুটতে স্টেশনে পৌঁছে মানুষের ভিড় দেখেন। ভিড় ঠেলে দেখেন সব শেষ। দেখেন তার প্রেমিকার সদ্য ট্রেনে কাটা রক্তাক্ত লাশ।

    এই ঘটনাটি তার জীবনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। জীবনে আর কখনও বিয়ে করেননি মনিরুজ্জামান মিয়া। বিড়াল ভালোবাসতো তার প্রেমিকা। প্রেমিকার স্মৃতি ধরে রাখতে বিড়াল পোষা শুরু করেন প্রেমিক মনিরুজ্জামান মিয়া। তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন, তখনও তার অনেকগুলো পোষা বিড়াল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে। এই বিড়ালগুলোই ছিল তার প্রেম। তার নিহত প্রেমিকার স্মৃতি।

    কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখে মনিরুজ্জামান মিয়াকে নিয়ে আবার লিখেছিলাম। তার সম্পত্তি গ্রাস করতে তাকে এক বাসায় বন্দী করে রেখেছে তার কোনো এক স্বজন! ওই অবস্থায় বন্দী থাকতে থাকতে তার মধ্যে মানসিক বৈকল্যের সৃষ্টি হয়। আমার আশা ছিল, পোস্টটি দেখে তাকে ওই অবস্থা থেকে উদ্ধারে এগিয়ে আসবে বিএনপির কেউ একজন। কারণ মনিরুজ্জামান মিয়া বিএনপির শিক্ষক নেতা, খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন। কিন্তু বিএনপি বা কেউ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি।

    মনিরুজ্জামান মিয়ার স্মৃতির প্রতি অনেক শ্রদ্ধা। ভালো থাকুন স্যার।

    লেখক : কথাসাহিত্যিক, গবেষক, নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়

    সম্পাদনা : জব্বার হোসেন

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *