৪র্থ গ্রেডের টাইমস্কেল পেয়ে পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন ৫ম ও ৬ষ্ঠ গ্রেডের ২৬ ক্যাডার
দেলওয়ার হোসাইন : গত ৯ মে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডার ব্যতিত অন্যান্য ২৬ ক্যাডার থেকে বিসিএস ২২তম ব্যাচ পর্যন্ত ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের আবেদন আহ্বান করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে চতুর্থ গ্রেডের টাইমস্কেল পাওয়ায় পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন ৫ম ও ৬ষ্ঠ গ্রেডের ওই ২৬ ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিএস সমন্বয় কমিটির মহাসচিব মো. ফিরোজ খান এ প্রতিবেদককে বলেন, টাইমস্কেলের কারণে ৫ম ও ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত করা হচ্ছে যা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপন্থী। ঐ চিঠির বলে এই কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, পদোন্নতির জন্য বেতনের গ্রেড বিবেচ্য বিষয় নয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রকৃতপক্ষে কোন গ্রেডের কর্মকর্তা সেটাই বিবেচ্য বিষয়। এই বৈষম্যের বিষয়ে বিভিন্ন ক্যাডার আনুষ্ঠানিকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে জানিয়েছেন। প্রয়োজনে ওই ক্যাডারদের সমন্বয় পরিষদ এ নিয়ে চ্যালেঞ্জ করবে।
ফিরোজ খান বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সুপার নিউমারারি পদে নির্দিষ্ট সময়ান্তে পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে উপরের ধাপে শূন্য পদ না থাকলেও তারা পদোন্নতি পান। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ নেই। তাদের পদোন্নতি হয় পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে। এক্ষেত্রে এক ধরনের বৈষম্য দেখা দিচ্ছে।
উপসচিব হলেন পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা। আর চতুর্থ গ্রেড হলোÑ উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদমর্যাদার মাঝামাঝি পর্যায়ের একটি অবস্থান। এ যুক্তিতে প্রশাসন ছাড়া অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের যারা এরই মধ্যে চতুর্থ গ্রেডের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তাদেরকে আবেদনের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে ২ জুন একটি আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু গত ৯ মে যখন আবেদন আহ্বান করা হয়, তখন এমন কোনো শর্ত ছিল না। ফলে চতুর্থ গ্রেডের অনেক কর্মকর্তাও তখন ডিএস পুলে ঢোকার আবেদন করেন। ২ জুনের আদেশের কারণে এখন তারা বাদ পড়ে যাবেন। এতে করে বৈষম্য দেখা দেবে বলে একাধিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা মনে করেন।
জানা যায়, কেবল প্রশাসন ক্যাডারের ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট সময়ান্তে পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেমন উপসচিব পদের কর্মকর্তারা তিন বছর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুগ্মসচিব হবেন। কিন্তু অন্য ক্যাডারের ক্ষেত্রে পদোন্নতি হয় পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে। আর পুলে ঢুকতে পারলে প্রশাসন ক্যাডারের মতোই পদোন্নতির সুবিধা পাওয়া যায়। এ কারণে উপসচিব একধাপ নিচের পদ হওয়া সত্ত্বেও অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা পুলে ঢুকতে চান।
এ বিষয়ে বিসিএস সমন্বয় কমিটির প্রচার সম্পাদক স.ম. গোলাম কিবরিয়া তথ্য ক্যাডারের পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি আবেদন জমা দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ ব্যাচের ৮ জন কর্মকর্তা এখনও ষষ্ঠ গ্রেডে অবস্থান করছে। তবে জাতীয় বেতনস্কেল ২০০৯ অনুযায়ী এ ব্যাচের কর্মকর্তাগণ টাইমস্কেল হিসেবে ৪র্থ গ্রেড অর্জন করেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে এটা কোনো পদোন্নতি নয়। সার্বিকভাবে একটি ব্যাচের কর্মকর্তাগণ সরকারের উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
স.ম. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ষষ্ঠ ধাপের কোনো কর্মকর্তা ৫ বছর পর্যন্ত কোনো পদোন্নতি না পেলে ৫ম ধাপের টাইমস্কেল পাবেন। আবার এ অবস্থায় ৮ বছর পর্যন্ত পদোন্নতি না পেলে ৪র্থ টাইমস্কেল পাবেন।
জানা যায়, চলতি অর্থবছর দুই দফায় উপসচিব পদে (ডিএস পুল) পদোন্নতি দেওয়ার জন্য আবেদন নেওয়া হয়েছে। আবার গত মাসেই এক দফায় কিছু কর্মকর্তা উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। তবে তারা আগের বছরের আবেদনকারী। আগের বছর আবেদন করে যারা বাদ পড়েছিলেন, তাদের এবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ফলে চলতি বছর আবেদনকারীদের কেউ এখনও পদোন্নতি পাননি। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি