
‘প্রিয়’ সম্বোধন করায় চটেছেন স্মৃতি ইরানি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বলা হয় স্মৃতি নাকি সাধারণত সুখের হয়! কিন্তু ‘প্রিয়’ হলে বিগড়েও যেতে পারে বার্তালাপ। এ স্মৃতি অবশ্য কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী। স্মৃতি ইরানি। কী যে এক কুক্ষণে তাকে ‘ডিয়ার স্মৃতি’ বলে সম্বোধন করে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে প্রশ্ন করলেন বিহারের শিক্ষামন্ত্রী অশোক চৌধুরি! লিখেছিলেন, ‘ডিয়ার স্মৃতি ইরানিজি, আমরা নতুন শিক্ষানীতি কবে পাব। আপনার ২০১৫ সালের ক্যালেন্ডার কবে শেষ হবে!’ এতেই চটে যান কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী। জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে, কিন্তু তা বলে মহিলাকে ‘ডিয়ার’ বলা! সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতির পাল্টা টুইট। জানতে চান, মহিলাদের কবে থেকে ডিয়ার বলে সম্বোধন করা শুরু করেছেন অশোকজি! স্মৃতির উত্তরে হতভম্ব বিহারের শিক্ষামন্ত্রী। সময় নিয়ে পাল্টা আক্রমণে নামেন তিনি। লেখেন, ‘অসম্মান করার জন্য নয়, আপনার জ্ঞাতার্থে জানাই… ডিয়ার শব্দটি দিয়েই কেজো ই-মেল শুরু হয়। সব সময় গোলগোল না ঘুরে কখনও তো যে প্রশ্ন করা হচ্ছে তার জবাব দিন।’
মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী বলছে, ক্ষুব্ধ স্মৃতি তখনই জাতীয় শিক্ষা নীতির প্রশ্নে বিহারের পরিস্থিতি কী, তা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ডেকে জানতে চান। তার পরেই স্মৃতির টুইট, ‘বিহার হল এমন একটি রাজ্য যারা শিক্ষানীতির প্রশ্নে তৃণমূল স্তরে কোনও সমীক্ষা ও আলোচনা করেনি।’ পাল্টা জবাব আসে কিছু পরই। এ বার নরেন্দ্র মোদিকে জড়িয়ে অশোকের টুইট, ‘কী ভাবে মিথ্যা প্রতিশ্র“তি ও দায় অন্যের ঘাড়ে ঠেলা যায় তা মোদির কাছ থেকে ভালই শিখেছেন স্মৃতি।’ পরের টুইটেই স্মৃতির ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত শিক্ষাগত যোগ্যতাকে কটাক্ষ করে অশোক লেখেন, ‘আমার ধারণা ইয়েলে এটা পড়ানো হয়নি।’ এ বার বিরত হন স্মৃতি। জবাব না পেয়ে রণে ক্ষান্ত দেন অশোকও। কিন্তু ততক্ষণে ‘ডিয়ার’ বিতর্ক রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছে টুইটারে। ঝড়ের মতো পোস্ট হতে শুরু করে একের পর এক টুইট।
কেউ লিখেছেন, ‘এই হল আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা।’ কারো কথায়, ‘উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা না করার ফল।’ কেউ আবার লিখেছেন, ‘অশিক্ষিত লোকজন পদে রয়েছেন। যাঁরা কিছুই জানেন না।’ দিনভর এই টুইট আক্রমণ চললেও, কোনো মন্ত্রী বা বিজেপির মুখপাত্র তো ছাড়, সাধারণ বিজেপি সমর্থকরাও পাশে দাঁড়াননি স্মৃতির। গোটা আক্রমণটাই নীরবে সহ্য করতে হয়েছে তাকে।
এখানেই শেষ নয়! স্মৃতি-কথায় আজ টানাটানি চলেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও। ২০১৩ সালে নরেন্দ্র মোদি অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন ও প্রিয়ঙ্কা চোপড়াকে ডিয়ার বলেই টুইট করেছিলেন। সেগুলির উল্লেখ করে ‘ট্রুথ অব গুজরাত’ নামে একটি অ্যাকাউন্টের কটাক্ষ, ‘ডিয়ার স্মৃতি ইরানি, খোদ প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রোটোকল মেনে চলছেন না। উনি আশা ভোঁসলেকে টুইটে ডিয়ার বলে সম্বোধন করেছেন।’
আনন্দ রঙ্গনাথন বা স্বাতী চতুর্বেদীর মতো অনেকে আক্রমণের জন্য বেছে নেন মন্ত্রী স্মৃতির একাধিক চিঠিকে। যেখানে স্মৃতিই ‘ডিয়ার’ শব্দটি লিখে চিঠি শুরু করেছেন। টুইটারে সেই চিঠিগুলি পোস্ট করে আনন্দ, স্বাতীরা জানতে চান, শিক্ষামন্ত্রীর সই করা চিঠিগুলি কি স্মৃতিরই লেখা? নাকি স্মৃতির নামে অন্য কেউ লিখেছে?
শুরুতে স্বতঃস্ফূর্ত হলেও, বিভিন্ন মহল থেকে তার উদ্দেশে পরের পর টুইট-বাণ ধেয়ে আসতেই রণে ভঙ্গ দেন স্মৃতি। কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। মোদি সরকারের বিতর্কিত শিক্ষামন্ত্রী নতুন করে বিতর্ক তৈরি করে ফের এক দফা অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন সরকারকে। পাটনায় অনেকে বলছেন, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার হাল ধরতে ব্যর্থ অশোক চৌধুরি। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও যা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কংগ্রেসের কিছু নেতা দলনেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কাছেও নালিশ ঠুকেছেন অশোককে নিয়ে। অভিযোগ, এ সব থেকে নজর ঘোরাতেই স্মৃতিকে আক্রমণ শুরু করেছিলেন অশোকবাবু। সেটা অনেকটাই বুমেরাং হয়েছে তারও।
