![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
গল্পগল্প মনে হয়, গল্প কিন্তু মোটেও নয়
রণজিৎ বিশ্বাস
ওর পরিচ্ছদ সবার মতো নয়। মুখটা মিহি কাপড়ে ঢাকা। যতটুকু দেখা যায় চোখ দু’টো বড় সুন্দর, বর্ণ বড় স্নিগ্ধ।
আঙুলগুলো চমৎকার। সঙ্গতি মেনে সবকিছু যদি হয়, সবকিছুই সর্বনাশা।
চা-বিরতিতে সে আমার টেবিলে বসল। বসার আগে সে বললÑ বসতে পারি স্যার!
বললামÑ বাই অল মিন্স! তখন তার পুরো মুখটা আমি দেখতে পাচ্ছি। তখন আবরণ সরানো। সেটি এজন্যও হতে পারেÑ মুখের’ পরে আচ্ছাদন নিয়ে খাওয়া যায় না। কিন্তু, যে টেবিলে সবাই নারী, তেমন একটিতেতো বসা যায়! পুরুষদের দিকে পিঠ দিয়ে। কিন্তু তা সে করল না। আমার টেবিলেই বসল। মুখোমুখি। বড় স্মার্টলি অনেক প্রশ্নের জবাব দিল। নিজে থেকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করল। স্বাস্থ্যবিষয়ক অনেক পরামর্শ দিল। আমার কফিটাও সেই বানিয়ে দিল। পানির বোতলটাও আমি তাকে দিয়েই খুলিয়ে নিলাম। ওঠার সময় মনে হলোÑ আরও কিছুক্ষণ থাকতে পারলে ভালো হতো। পরিষ্কার বুঝতে পারলামÑ তার চোখেও একই কথা।
এই মেয়েটি আমার শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থী। একটা সময় মনে হলো, সে অনেক কিছুই করে, অনেক কিছুই বলে ও অনেক কিছুই দেখায়, যা সে করে, তা সবাই দেখতে পায়, কিন্তু, সবার জন্য সে করে না। করে শুধু একজনের জন্য।
ছ’মাস পর, একদিন যেদিন তাদের চলে যাওয়া যেদিন তাদের বিদায় নেওয়া, সেদিন তাকে দেখলাম অন্য প্রগলভতায়। দর্শকদের মাঝে এক তরুণের পাশে বসে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মাথা ঝোঁকাচ্ছে। হাতে প্রায় হাত লাগিয়ে বসেছে।
একবার দু’বার আড়চোখে দেখলাম, তারপর ক্রোধে ঈর্ষায় সেদিকে আর তাকালামই না। অথচ, আমার পাশে গৃহকোণসঙ্গী বসা, গায়েগায়ে লাগা, আকর্ষণীয়, স্মার্ট, আমার চেয়ে দশ বছরের ছোট। মানুষ যে মনে মনে কতরকম খেলে! তার ভাবনপুরানে কত ধরনের লেখা যে লেখে, তার স্কেচ বইয়ে কত ধরনের আঁকিবুকি যে করে! স্বয়ং বিধাতাও তার সৃষ্টির সব খবর রাখতে পারেন না। তারওতো ক্ষমতা ও সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা আছে! তিনিওতো কখনও কখনও জিজ্ঞাসপ্রিয় ও জুগুপ্সাপ্রিয় মানুষকে বলেনÑ অত প্রশ্ন করিসনাতো বাপ। তোদের বাংলাদেশের মানুষ যে কবে ভালো হবে, প্রতিহিংসাপরায়ণতা বাদ দেবে, ভেদবুদ্ধিহীন হবে আর ছদ্মসাম্প্রদায়িক থাকবে নাÑ এসব কঠিন প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে চাইবি না। আমি ততদিন নাও বাঁচতে পারি।
দু’বছর পর নাটোরের বড়াইগ্রামে সেই মেয়েটির সঙ্গে দেখা। আমি গিয়েছিলাম সরকারি কাজে। তখন সেখানকার উপজেলায় তার নিয়োগ হয়েছে। কয়েকদিন আগে।
সরাসরিই জিজ্ঞেস করে বসলামÑ কেমন আছো? সংসার কেমন চলছে?
: সেটি আমার এখনও হয়নি স্যার।
: তাহলে কোর্সÑএন্ডিং ডিনারে তোমার পাশে যিনি ছিলেন।
: আমার এক কোর্সমেট।
: খুব ঘনিষ্ট?
: মোটেও না। ভান করছিলাম।
: কেন?
: নইলে যে আপনাকে থামাতে পারছিলাম না!
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাবেক সিনিয়র সচিব
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)