সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ না ঘটলে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়বে
আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার রায়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ
এস এম নূর মোহাম্মদ : সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ না ঘটলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। মুখ থুবড়ে পড়বে গণতন্ত্র। গাজীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লা মাস্টার হত্যা মামলার রায়ে গতকাল বুধবার এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ বলা হয়, অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে কোনো দ্বিধা কাজ করেনি যে, এই সভায় বিক্ষিপ্তভাবে গোলাগুলি করলে প্রচুর লোক মারা যেতে পারে। তারা এতোটাই বেপরোয়া ছিলেন এবং ভেবেছিলেন যে, তাদের চেহারা অনাবৃত থাকার কারণে কেউ তাদেরকে চিনলেও কিছু হবে না। তাদের এই ধরনের ভাবনার কারণ হল তাদের পেছনে এমন একটি শক্তি রয়েছে যে বা যারা তাদেরকে সকল প্রকার ভবিষ্যত সম্ভাব্য ঝামেলা থেকে রক্ষা করার শক্তি রাখেন। স্থানীয় বেপরোয়া উশৃঙ্খল রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা এ ধরনের চিন্তা করতে পারে। কারণ আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ ধরনের উশৃঙ্খল কর্মীদেরকে পরিহার করার প্রবণতা দেখা যায় না এবং অনেকাংশে তারা এদের উপর নির্ভরশীল। যা কিনা দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি বিকাশের ক্ষেত্রে এক বিরাট অন্তরায়।
আদালত বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি জঘন্যতম ঘটনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের হত্যাকা- অতীতে খুব কমই সংঘটিত হয়েছে। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন কোন পর্যায়ে পৌছেছে তা টঙ্গীর ওই ঘটনা থেকে উপলব্ধি করা যায়। আমাদের সংবিধান ও অন্যান্য আইন অনুযায়ী একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে মানুষের চাওয়া পাওয়া ও বিভিন্ন রকম দাবী-দাওয়া মিটানোর জন্য তথা মানুষের কল্যাণে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সুচারু রুপে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার থাকে সেই রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িতপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলটির সংসদ সদস্যগণের মধ্য থেকেই মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। সংসদ সদস্যগণ বা উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের উপর নির্ভরশীল থাকতে দেখা যায়। আবার বিপরীতভাবে এও বলা চলে, স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীগণই তাদের সমর্থন ও কর্মকা-ে উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে পরিচালিত করে থাকেন।
আদালত আরও বলেন, যে স্থানে ও যেভাবে এই হত্যাক-টি সংঘটিত হয়েছে, এক কথায় বলা চলে এটি ব্যাপক হত্যাকা- বা ম্যাসকিলিং। নিঃসন্দেহে বলা যায় নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু গং এই ম্যাসকিলিংয়ের জন্য সরাসরি দায়ী।
আদালত আহসান উল্লাহ মাস্টারের আদর্শের কথা বলতে গিয়ে বলেন, তার মতো একজন আদর্শবান সংসদ সদস্য বেচে থাকলে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণে তিনি আরও অনেক ভাল কাজ করতে পারেতন। যা থেকে জাতি উপকৃত হতো। অভিযুক্তরা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতিকে সে সুযোগ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। আজকের সমাজে তার মতো আদর্শবান রাজনৈতিক নেতার বড়ই অভাব। সম্পাদনা: সৈয়দ নূর-ই-আলম