স্রষ্টার দরবারে রোজার মূল্যায়ন
মুফতি মুহাম্মদ আবু সালেহ
আজ আমরা চরম একটি সত্যের সম্মুখীন হব। প্রকাশ করব আমাদের বিবেকের মূল্যবোধের অবস্থান। চেষ্টা করব, চোখে আঙ্গুল দিয়ে নিজেদের বিবেকহীনতার বিষয়টা দেখিয়ে দিতে। মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। ঠিক আর দশটা সৃষ্টির মত করে নয়। অথবা ‘কুন’ শব্দ ব্যবহার করে চোখের পলকে আসমান জমিন সৃষ্টি করার মত করে নয়। কিছুটা অন্যরকমভাবে। অনেকটা সময় নিয়ে। মজলিশ করে। একটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে।
আল্লাহ আর মানুষের মাঝে সৃষ্টিগতভাবে রয়েছে ভালবাসার বন্ধন। তাই তিনি মানুষকে ভালবাসেন। অসম্ভব ভালবাসেন। এর পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। প্রিয়জন কষ্টে থাকুক, এটি ভালবাসার দাবির পরিপন্থী। তাই আল্লাহও চান না, প্রিয় বান্দা জাহান্নামের বাসিন্দা হোক। আগুনে জ্বলুক। এ জন্যই বান্দার জন্য সম্ভাবনার সকল দুয়ার খুলে দিয়েছেন। বান্দা যেন জান্নাতমুখী হতে পারে। জীবনের যে কোনো মুহূর্তে। খাহেশাতে নফসানির কারণে মাঝে মাঝেই বান্দার পদচ্যুতি ঘটবে। হতাশ হবার কোনো কারণ নেই। ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক অপশন আছে। তাওবা করে পরিশুদ্ধ হও। এরপর লেগে যাও নফল ইবাদতে। করতে থাকো অতীত জীবনের ক্ষতিপূরণ। আরো সুযোগ চাও? অল্প সময়ে বেশি সওয়াব কামাতে চাও? ¯্রষ্টার পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থাও আছে। রমজান। স্বল্প সময়ে বেশি আয়ের মৌসুম। কুরআন হাদিসে বিষয়টি একেবারেই পরিস্কার।
রমজান এলে উর্ধ্ব জগতে শুরু হয় রমজানবরণ প্রস্তুতি। খোদার দরবারে আলাদাভাবে করা হয় এর মূল্যায়ন। রমজানকে কেন্দ্র করে জান্নাতকে সাজানো হয়। জান্নাতের সকল দরজা খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। থামিয়ে দেওয়া হয় কবরের আজাব। রহমত নাজাত আর মাগফেরাতকে ব্যাপক করে দেওয়া হয়। রোজায় নেক আমলের প্রতিদান ৭০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুল সা.বলেছেন, ‘রমজানে আল্লাহ তায়ালা আদম সন্তানের প্রতিটা আমলের প্রতিদান ৭০গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন।’ ইবনে মাজাহ : ১১৮
একই সাহাবি থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে নবি সা.বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে আল্লাহ তায়ালা সকল শয়তান আর দুষ্ট জিনকে বন্দি করে ফেলেন। জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর একটিও খোলা হয় না। জান্নাতের সকল দরজা খুলে দেওয়া হয়। এর একটিও বন্ধ করা হয় না।’ ইবনে মাজাহ : ১১৮ এগুলো করা হয় রমজানের যথাযথ মূল্যায়নে। এ হচ্ছে স্রষ্টাকর্তৃক রোজার মূল্যায়ন।
রমজান আমাদের জন্য। এর পুরস্কার আমাদের জন্য। রমজানের ঘোষিত ফজিলত আমাদের জন্য। এর কোনোটিই আল্লাহর জন্য নই। রোজা পালনে আমাদের লাভ। আল্লাহর নই। তাই রোজার যথাযথ মূল্যায়ন আমাদের পক্ষ থেকে হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। রমজান উপলক্ষে আল্লাহ জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন। আমরা গুনাহের অভ্যাস ছাড়তে পারি না। তিনি রহমতের সকল দুয়ার খুলে দেন। আমরা নিয়মিত কুরআনের পাতা খুলতে পারি না। আল্লাহ কবরের আজাব থামিয়ে দেন। আর আমরা পারি না বদ অভ্যাসগুলো পরিহার করতে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা হয়তো চিন্তা করিনি। এবার যখন সামনে এসেছে, একটু চিন্তা করে দেখুন। আমাদের অনূভুতি শক্তি কতখানি হ্রাস পেয়েছে? বিবেকের মূল্যবোধের এ জায়গাটিতে আমরা কি করছি? পবিত্র রমজানের যথাযথ মূল্যায়ন? নিজের ইমানি উন্নতির জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করছি? ফাজায়েলে রমজান হাসিলের জন্যই বা কতটুকু মেহনত করছি? বিষয়গুলো কি ভাবার মত নয়? প্রশ্ন রইল আপনার বিবেকের কাছে।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট