মাওলানা আমিন আশরাফ
[সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. (৬ অক্টোবর ১৮৭৯-১৯৫৭) ছিলেন ভারত উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার। দীনের প্রচার প্রসারে যার রয়েছে অসামান্য অবদান। হাদিস ও ফিকহে তার পা-িত্যের জন্য শাইখুল ইসলাম উপাধি লাভ করেন। আজ প্রকাশ হলো যুগশ্রেষ্ঠ এই বুজুর্গের রমজানের দিনলিপি।]
১৩৫৬ হিজরিতে হযরত হোসাইন আহমদ মাদানি রহ. সিলেটে অবস্থান করার সময় রমজান মাসের বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে একটি গ্রন্থ লিখেন মাওলানা আবদুল হামিদ আজমী। তিনি সিলেটে দারোগা আবদুস সাত্তারের বাড়িতে অবস্থান করতেন সেখান থেকে দুই মাইল দূরে নয়া সড়কের বড় মসজিদে পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। কাছে দূরের ভক্তরা তাঁর সাক্ষাতের জন্য আসতেন, রমজানে তারা এই মসজিদে অবস্থান করতেন। হজরত পুরো রমজান মাস ওই মসজিদের ওয়াক্তিয়া নামাজের ইমামতি করতেন। তার নামাজের মুসাল্লার চারপাশে পানিতে ফুঁ নিতে অনেক বোতল জমা পড়তো। জোহর পড়ে তিনি সেগুলোতে ফুঁ দিতেন। কেউ যদি কোনো লিখিত আবেদন করতেন সবগুলো তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তেন এবং যথাযথ উত্তর লিখে দিতেন। মাঝে মাঝে তাবিজও লিখে দিতেন। তারপর তিনি অন্যান্য দিনের রুটিন মাফিক কাজগুলো আঞ্জাম দিতেন।
আসরের আজান হলে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে মসজিদে চলে যেতেন। আসরের পর দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবদুল জলিল সাহেবের সঙ্গে সোয়াপাড়া কুরআন শরিফ তিলাওয়াত একজন অপরজনকে শোনাতেন। ইফতারের আগে এই কাজ শেষ হলে হজরত মুরাকাবা ধ্যানে মগ্ন হয়ে যেতেন। অন্যরা জিকির-আজকারে লেগে যেতেন। ইফতারের সময় সারা দস্তরখানে আনন্দের জোয়ার বয়ে যেত। কিন্তু হজরত ধ্যানের মধ্যে নিমগ্ন থাকতেন। হাদিসে এসেছে, রোজাদারের জন্য দুটি সময় খুব সুখের। তার মাঝে একটি হলো, ইফতারের সময়। হজরতের দস্তরখান সেই হাদিসের বাস্তব উদাহারণ ছিল। রকমারি ইফতারের আয়োজন থাকাসত্ত্বেও হযরত শুধু খেজুর ও জমজমের পানি নিতেন।
মাগরিবের নামাজ খুবই সংক্ষিপ্তাকারেই পড়তেন। পরে তিনি লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ পড়তেন, যাতে আধঘণ্টা লেগে যেত। এরপর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দুআ করতেন। উপস্থিত সবাই ওই দুআয় শামিল হতেন। তারাবিতে তিনিই ইমামতি করতেন। তাঁর পেছনে তারাবি পড়ার জন্য অনেকদূর থেকে লোকজন আসতেন। হযরতের পেছনে এবং তাহাজ্জুদ পড়ে সবাই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেত।
[আবদুল হামিদ আজমীর পুস্তিকা থেকে]