া হাবীবুল্লাহ সিরাজ
‘কদর’ বরকতময় এক শব্দ। আল্লাহ ওয়ালিদের সন্ধানরাত্রি। প্রতীক্ষার রজনী। কামনাবাসনার রাত্রি। অসজ্র সৃষ্টির আশান্বিত রাত। হ্যাঁ, এমনটাই আমাদের জানান দিচ্ছে জগত সেরা তাফসির ইবনে কাসির। লেখা হয়েছে, এ রাতে সিদরাতুল মুনতাহায় হজরত জিবরাইল আ. সহ অসংখ্যা ফেরেস্তা দুনিয়ায় নেমে আসেন। ইবাদত আর সেজদায়রত থেকে মুসলিম নারীপুরুষের জন্য দোয়া করতে থাকেন। সেই মহামান্বিত কদর’ এর বর্ণনা কুরআনেও কতোটা বাঙময়। বলা হচ্ছে, ‘আমি কদর রজনী দিয়েছি। জানেন কি আপনি কদর কী? ‘কদর’ হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম একটি রজনী। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের চাইতে উত্তম।
আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদিকে হায়াত দিয়েছেন অল্প পূর্ববতি উম্মতের তুলনায়। দেয়া হয়েছে ৬০/৭০ বছরের ছোট্ট পরিসরের জীবন। আর আগের উম্মতের হায়াত ছিল কম করে হলেও ১০০/১৫০ বছরের। তাই তারা আমলে আমলে সওয়ারের দরিয়া বানিয়ে ফেলতো আল্লাহ নৈকট্যে এগিয়ে যেত। এই উম্মতও যেন আমলে আমলে নেকির দরিয়া বানাতে পারে, হতে পারে আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দা এ কারণে তাদের দেয়া হয়েছে ‘কদর দৌলত’।
কদর কবে হবে জানা নেই উম্মতের। তাই তার সন্ধানে অহর্নিশ দৌড়ঝাপ। রমজান এলেই মুমিন চুপিসারে খুঁজতে থাকে কদরের দৌলত। যদি মিলে যায় কদর দৌলত! তাহলে পেয়ে যাবে তিরাশি বছর চার মাসের বেশি রাত্রি জাগরণের সওয়াব। কবে হবে সেই তিরাশি বছর চার মাসের একরাত কদর। হাদিস থেকে জানা যায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাম আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে কদর তালাশ করো। এ হাদিস দ্বারা এটা নিশ্চিত হওয়া যায়, শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিতে কদরের দৌলত লুকায়িত। তাইতো আমরা দেখতে পাই রাসূলুল্লাহ এর দায়েমি আমলের অন্যতম একটি আমল হচ্ছে রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। মুসলিম শরিফের এক হাদিসে রয়েছে যা বর্ণনা করেছেন প্রসিদ্ধ সাহাবি উবাই ইবনে কাব। তিনি বলেন, রমজানের ২৭তম রাতে কদর। এই হাদিসের অনুরূপ হাদিস পাওয়া যায় ইবনে ওমর ইবনে আব্বাস ও মুয়াবিয়া রা. থেকে। উল্লিখিত বর্ণনা সামনে রেখে একথা বলা যায়Ñ কদর রমজানের শেষ দশে। তাই আল্লাহপাগল মুমিন বান্দা কদরের প্রতীক্ষায় শেষ দশের ইতিকাফ বা কিয়ামুল লাইল করে। আর যে ইতিকাফ বা কিয়ামুল লাইল করে সে নিশ্চিত আল্লাহর পূর্ণ রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের সুসংবাদ পাই। এমন রাতের প্রতীক্ষায় অষ্ট প্রহর গণনাও সওয়ার আর পূণ্যের কাজ। আল্লাহ আমাদের সকলকে কদরের দৌলতে দৌলতবান করুন।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট