অর্ধশতাধিক প্রাণ বাঁচিয়ে যিনি এখন অরল্যান্ডোর নায়ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অরল্যান্ডোর পালস নাইট ক্লাবের হামলার দিন অন্তত ৬০ থেকে ৭০ জনের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ওই ক্লাবের একজন পালস বাউন্সার। সিবিএস নিউজে এ তার সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইমরান ইউসুফ নামের ওই পালস বাউন্সারকে দেখা হচ্ছে আরল্যান্ডোর নায়ক হিসেবে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মানুষের মুখে মুখে ফিরছে তার নাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অভিনন্দিত হচ্ছেন তিনি। সিবিএস নিউজ
হামলার দিন শনিবার। অন্যান্য দিনের মতোই পালস নাইট ক্লাবে ডিউটি করতে আসেন ইমরান। হঠাৎ গুলির শব্দে সজাগ হন তিনি। একসময় মার্কিন নৌ-সেনা বাহিনীতে নাবিক হিসেবে কাজ করতেন। চাকরিসূত্রে বেশ কয়েকবছর কাটিয়েছেন আফগানিস্তানে। তাই সদ্য নাবিকের চাকরি থেকে অবসর নিয়ে পালসে বাউন্সার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বছর চব্বিশের ইমরান। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেই প্রথম চার রাউন্ড গুলির শব্দ শোনার পরেই তাঁর বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে ‘হাই ক্যালিবার’ বন্দুক থেকে গুলি চলছে নাইটক্লাবে। বিষয়টি বুঝে নিয়েই ইমরান ছুটে এসে ক্লাবের বহু সদস্যের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন সে রাতে। আর তাঁকেই এখন নায়ক হিসেবে বরণ করে নিয়েছে গোটা অরল্যান্ডো।
মার্কিন টেলিভিশন সিবিএসকে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন ইমরান ইউসুফ। তিনি বলেন ‘হামলা হয়েছে বোঝার পর আমি জোরে জোরে চিৎকার করছি, দরজা খোল… দরজা খোল…। কিন্তু কেউ এক চুল নড়ছে না। কারণ তারা সবাই তখন চরম ভীত। তখন আমি তাদের উদ্দেশে বললাম- এখন একটিই রাস্তা, আমরা হয় সবাই মিলে বাঁচার পথ খুঁজব নয়তো সবাই একসঙ্গে মরব। ইমরান জানান, তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে একে একে অন্যদের সেখান থেকে একটি ছোট্ট দরজা দিয়ে মানুষদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন তিনি।
দরজা বন্ধ করে বের হওয়া সবশেষ ব্যক্তি ওই ইমরান ইউসুফ। যিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে এতোগুলো প্রাণ বাঁচিয়েছেন। সেজন্যই তিনি নায়কের মর্যাদায় আসীন হয়েছেন।
কান্নারত ইমরান সিবিএস নিউজকে আরও বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে এখন আমার মনে হয়, হয়তো আরও মানুষের জীবন আমি বাঁচাতে পারতাম। কিন্তু পারিনি, অনেক মানুষকে সে মেরে ফেলল, অনেককে সে হত্যা করল।’
ইমরানের সাহসিকতার কাহিনি এখন লোকের মুখে মুখে ঘুরছে। টুইটারে তার সাহসিকতা ও মানবিক বোধ নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। এসব কিছুতে অবশ্য বেশ বিব্রত ইমরান। নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া সাম্প্রতিক এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘আমায় অনেকেই নায়কের আসন দিচ্ছেন দেখছি। কিন্তু আমি তখন যা করেছি, সেটা একটা ঘটনার প্রতিক্রিয়া মাত্র।’ ইমরান জানিয়েছেন, কতো বেশি মানুষকে বাঁচানো যায়, সেটাই তার লক্ষ্য ছিল। অন্য কিছু নয়।