এক-চতুর্থাংশ রেমিট্যান্স আসছে অবৈধ পথে : পরিকল্পনামন্ত্রী
জাফর আহমদ : বাংলাদেশে মোট রেমিট্যান্সের ২২ দশমিক ১০ শতাংশ আসছে অবৈধ পথে। আর আনুষ্ঠানিক খাতে আসছে ৭৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। প্রবাস আয় বিনিয়োগসংক্রান্ত জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য। গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্যে রাখেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক আব্দুল ওয়াজেদ এবং প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রেমিট্যান্সের বিনিয়োগ যাতে মূল ধারায় হয় সেজন্য আমরা প্রকল্প হাতে নেওয়ার চিন্তা করছি। সারাদেশে একবারে করা না হলেও ক্লাস্টারভিত্তিক প্রকল্প নেওয়া হবে। যাতে প্রবাসীরা বিনিয়োগ আরও বাড়াতে পারেন। অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীরা দেশের রুট লেভেলে বিনিয়োগ করছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায়, ২০১৫ সালে প্রবাস আয় গ্রহণকারী পরিবার কর্তৃক গ্রহণ করা প্রবাস আয়ের গড় পরিমাণ ৩ লাখ ২ হাজার ১৮৩ টাকা। যার মধ্যে নগদে গ্রহণ করা হয়েছে গড়ে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৪৯৩ টাকা এবং দ্রব্যমূল্য হিসেবে গড়ে ১২ হাজার ৬৯০ টাকা। প্রাপ্ত গড় প্রবাস আয়ের হিসাবে বিভাগসমূহের মধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রথম। পরের অবস্থানেই রয়েছে সিলেট বিভাগ। অন্যদিকে, সর্বনিম্ন গড় প্রবাস আয় খুলনা বিভাগে।
২০১৫ সালে গৃহীত মোট প্রবাস আয়ের ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ জাতীয়ভাবে প্রবাস আয় গ্রহণকারী পরিবারকর্তৃক বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই বিনিয়োগের হার ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ (২৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ)। এর পরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে বরিশাল (২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ), খুলনা (২৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ), চট্টগ্রাম (২৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ), সিলেট (২২ দশমিক ৬০ শতাংশ), রাজশাহী (২২ দশমিক ৪১ শতাংশ) এবং সর্বনিম্ন (১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ) রংপুর বিভাগে।
প্রাপ্ত ফলাফল হতে দেখা যায়, বিদেশ থেকে প্রবাস আয় প্রেরণের ক্ষেত্রে ব্যাংক সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত মাধ্যম। প্রায় অর্ধেক প্রবাসী প্রবাস আয় প্রেরণের মাধ্যম হিসেবে ব্যাংকের সাহায্যে গ্রহণ করেন। এর পরের অবস্থানেই আছে মোবাইল ব্যাংকিং/বিকাশ এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানিগ্রাম ইত্যাদি। সকল প্রবাস আয়ের মধ্যে ৯৬ শতাংশ নগদ হিসাবে এবং অবশিষ্ট ৪ শতাংশ দ্রব্যমূল্য হিসাবে প্রেরণ করা হয়ে থাকে।
ফলাফল হতে দেখা যায়, প্রায় অর্ধেক (৪৭ দশমিক ২২ শতাংশ) প্রবাস আয় গ্রহণকারী পরিবার ২০১৫ সালে গ্রহণ করা প্রবাস আয় হতে বিনিয়োগ করেছ। সকল বিভাগের মধ্যে বরিশাল বিভাগের সর্বোচ্চ (৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ) পরিবার এ বিনিয়োগ করেছে। যার পরের অবস্থানেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ (৫১ দশমিক ৭৩ শতাংশ) এবং সর্বনিম্ন বিনিয়োগ (৩৮ দশমিক ২০ শতাংশ) রাজশাহী বিভাগে।
২০১৫ সালে গৃহীত প্রবাস আয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে গড়ে ৭৬ হাজার ৫৪৬ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিভাগসমূহের মধ্যে এই পরিমাণে বিস্তর তারতম্য পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রবাস আয় থেকে গড় বিনিয়োগের পরিমাণ ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ (৯৮ হাজার ৪৬৯ টাকা), যার পরের অবস্থানে রয়েছে বরিশাল (৭৫ হাজার ৭১৩ টাকা), সিলেট (৭৫ হাজার ২৮৮ টাকা) এবং চট্টগ্রাম (৭৪ হাজার ৪০১ টাকা)। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম