এক বছরে ৪৬৯ জন এইচআইভি আক্রান্ত শনাক্ত, মৃত্যু ৯৫ জনের
রিকু আমির : ২০১৫ সালে বাংলাদেশে নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত ৪৬৯ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ৯৫ জন। অন্যদিকে, ১৯৮৯ সালে সরকারের ন্যাশনাল এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম শুরু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত এইচআইভিতে আক্রান্ত শনাক্ত করা গেছে ৪ হাজার ১৪৩ জনের। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৫৮জন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ন্যাশনাল এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
উপস্থাপন করা তথ্যে জানানো হয়েছেÑ ২০১৫ সালে নতুন শনাক্ত ৪৬৯ জনের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বিবাহিতরা, সংখ্যা ২৬৩। এছাড়া অবিবাহিত ৫২, সিঙ্গেল ৫২, তালাকপ্রাপ্ত ৯, স্বতন্ত্র ৩, বিধবা ২৭, ডিসকরডেন্ট ৬১ জনের মধ্যে এইচআইভি পাওয়া গেছে। দেশের ৯১টি এইচআইভি ল্যাবে পরীক্ষা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে এইডস প্রোগ্রামের মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তফা মঈন জানান, ওই সময়ে শনাক্ত ৪৬৯ জনের মধ্যে ৩৪৪ জন পুরুষ, ১১৭ জন নারী ও ৮ জন হিজড়া রয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, বয়সভেদে ওই ৪৬৯ জনের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি আক্রান্তদের বয়স ২৫-৪৯ বছর, সংখ্যা ৩৫৮। এছাড়া জেলাভিত্তিক হিসেবে, সবচেয়ে বেশি এইচআইভি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ঢাকা জেলা থেকে, সংখ্যা ১৯৫। এরপর যথাক্রমে চট্টগ্রাম ১০৪, সিলেট ৯৮, খুলনা ৪১, বরিশাল ১৩ জন। ৬ জন করে শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও রংপুরে।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীসহ অনেকেই অংশ নেন। আয়োজনের প্রধান অতিথি ন্যাশনাল এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মাহবুবা বেগম বলেন, এইসআইভি প্রতিরোধে জনসচেতনা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপুর্ণ।
প্রোগ্রামের সহকারী পরিচালক ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সবার অধিকার সমানভাবে সংরক্ষণ করে থাকে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে রোগীর পেশা বিবেচনায় আসে না। এইচআইভির ক্ষেত্রে যেসব জনগোষ্ঠী ঝুঁকিপূর্ণ যেমন- বাণিজ্যিক যৌনকর্মী, মাদকাসক্ত, সমকামী সব ব্যক্তিই তাদের চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিকভাবেই পাবেন। তিনি এসডিজি অর্জনের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে এইচআইভির প্রকোপ শূন্যের কোটায় আনতে সাংবাদিকদের ভূমিকার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
ইউএনএইডস বাংলাদেশের প্রতিনিধি নাহিয়ান শাহ বলেন, এইচআইভিবিষয়ক পর্যাপ্ত তথ্য না থাকার কারণে সেবা প্রদানকারী ডাক্তার, নার্সরা সেবাদানের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন।
মুক্ত আলোচনা পর্বে সেক্সওয়ার্কার নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক চুমকী বেগম জানান, যৌনকর্মী পরিচয় পাওয়ার পর ডাক্তার তার চিকিৎসা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেন, চিকিৎসার জন্য নিজের পরিচয় গোপন রাখতে হয়। যৌনকর্মীরা ডাক্তারের নিকট যৌন অভ্যাসের কথা গোপন করার ফলে তাদের রোগের সঠিক কারণ চিহ্নিত হয় না। ফলে সঠিক চিকিৎসাও পাওয়া যায় না।
দুর্জয় নারী সংঘের সভানেত্রী রহিমা বেগম বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস মুক্ত হবে না। বরং ২০২০ সালের মধ্যে এইডস রোগীর সংখ্য দ্বিগুণ হবে বলে আশঙ্কা করেন। তিনি মাঠ পর্যায়ে কনডমের অভাবের কথাও বলছেন। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম