মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে, দাঁড়াবেই
তুষার আবদুল্লাহ
প্রহর গুনছিলাম, কখন জনগণ রুখে দাঁড়াবে? একের পর এক গুপ্তহত্যা শুরু হবার পর থেকেই এই অপেক্ষা। আমরা দেখে আসছি, অরাজনৈতিক নিরীহ ব্যক্তিদের কিভাবে টার্গেট কিলিং-এর শিকার হতে হচ্ছে। শুরুটা হয়েছিল ব্লগার, লেখক, প্রকাশকদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে। পরে এই হত্যা বিদেশি নাগরিক, ধর্মীয় পুরোহিত, শিক্ষকের ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীও রক্ষা পাননি। সর্বশেষ, মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী হামলার শিকার হন। স্বস্তির খবর হলো, রিপন চক্রবর্তী প্রাণে বেঁচে গেছেন। তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। বড় সুখবর হচ্ছে, হামলাকারীদের একজনকে আটক করতে পেরেছে স্থানীয় জনগণ। রিপন চক্রবর্তীর চিৎকার শুনে এগিয়ে এসেছিলেন তার প্রতিবেশিরা। প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসাতেই প্রাণে রক্ষা পান রিপন চক্রবর্তী। ধরা পড়ে তিন হামলাকারীর একজন ফাহিম। আমরা এতদিন কথা বলে আসছিলাম, হামলাকারীরা মোটরসাইকেল আর চাপাতি নিয়ে এসে হত্যা করে চলে যাচ্ছে।
কোনো কোনো হত্যাকা- ঘটেছে দিবালোকে। যেখানে চারপাশের মানুষের ভূমিকা ছিল দর্শকের। পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মিতুকে হত্যার সময়ও একই দৃশ্য চোখে পড়েছে। যদি আশপাশের মানুষ হামলাকারীদের ধাওয়া বা সবাই একযোগে চিৎকার করে উঠতেন তাহলে কয়েকটি প্রাণ হয়তো রক্ষা করা যেত।
মাদারীপুরে ফাহিমকে আটক করে স্থানীয় বাসিন্দারা সেই প্রমাণ রেখেছেন। যদিও তারও আগে বেগুনবাড়িতে একজন ব্লগারকে হত্যার পর হামলাকারীদের ধরে ফেলেছিল একজন হিজড়া। তখন বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত হলেও, সাধারণ মানুষ সেই বীরত্বকে অনুসরণ করেনি।
এককভাবে হয়তো প্রতিরোধ করতে গেলে খানিকটা ঝুঁকি রয়ে যায়। একথা সত্যি। কিন্তু সংঘবদ্ধভাবে যদি মহল্লা, এলাকাবাসী এবং পথচারীরা এগিয়ে আসেন, তাহলে গুপ্তহত্যা প্রতিরোধ অনেকটাই সম্ভব। গ্রাম, পাড়া, মহল্লা, অ্যাপার্টমেন্টকে নিরাপদ রাখতে এলাকাবাসীকে সংঘবদ্ধ হতে হবে। পরিবার ও সমাজের বিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিচ্ছে গুপ্তহত্যাকারীরা। সুতরাং নিরাপত্তার স্বার্থেই এখন সময় এসেছে বিচ্ছিন্নতার দেয়াল ভাঙার।
লেখক : হেড অব নিউজ, সময় টেলিভিশন
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন