বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাংসদ ও আহসানউল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল আমার মা ও দাদী বেঁচে আছেন, অধীর আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন বাবার হত্যাকান্ডের বিচারের শেষ দেখার
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান
আমার মা ও দাদী বেঁচে আছেন, অধীর আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন বাবার হত্যাকা-ের বিচারের শেষ দেখার, অপরাধীর সাজা দেখারÑ দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা ও সাবেক সাংসদ আহসানউল্লাহ মাস্টারের ছেলে সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল।
তিনি বলেন, আমার মা-দাদী কোনোভাবেই এটা মেনে নিতে পারছেন না। এলাকাবাসীও ক্ষুব্ধ। বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা। সাধারণ এসব মানুষও বুঝতে পারছেন না, এটা কী হলো? হাইকোর্টের রায়, এমন বিক্ষোভ করা হয়তো ঠিক নয়। তারপরও এই রায়ে অসন্তুষ্ট মানুষ তাৎক্ষনিকভাবে প্রতিবাদ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বাবার হত্যা মামলায় হাইকোর্টে দেওয়া রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। যারা হত্যার ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করেছিল, সরাসরি হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের ছয়জনের সাজা বহাল রেখেছেন মহামান্য আদালত, এটা ঠিক আছে। কিন্তু ফাঁসির দ-ে দ-িত যে কয়েকজনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু, আনোয়ার হোসেন আনুকে। মঞ্চের পেছন থেকে বাবাকে প্রথম গুলিটি করেছিল, আনু। কিভাবে এই আসামি ফাঁসির দ- থেকে যাবজ্জীবন সাজা পায়, এটা আমাদের বোধগম্য নয়।
জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু, আনোয়ার হোসেন আনু, জাহাঙ্গীর ও মশিউর রহমান মশু এবং আরও কয়েকজনÑ এরা তো আপিলও করেনি। নিম্ন আদালতে যখন মামলা চলছিল, তার আগে থেকেই এরা পলাতক। তারপরও কিভাবে ফাঁসি থেকে যাবজ্জীবন সাজা পায় এরা?
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের আইনি প্রক্রিয়ায় কোনো দুর্বলতা ছিল বলে মনে হয় না। কারণ আমাদের শক্তিশালী আইনজীবী টিম রয়েছে। আমাদের পক্ষে লড়ছেন তারা। আইনি সকল প্রক্রিয়ায়ই আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। আসামিদের অনেকেই আপিল না করা সত্ত্বেও কিভাবে তারা সাজা মওকুফ পায় তা বুঝতে পারছি না, কিভাবে কী হলো। অপরাধীদের সাজা মওকুফে সাধারণ মানুষ ও পরিবারের সদস্যরা খুব মর্মাহত। কোনোভাবেই আমরা তা মেনে নিতে পারছি না। আমরা অবশ্যই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতে যাব। সেখানে আমরা ন্যায়বিচার পাব বলে বিশ্বাস করি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই সাংসদ বলেন, অপরাধীদের যদি যথাযথ সাজা না হয়, তাতে অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হয়। একজন জনপ্রতিনিধিকে হত্যা করেও যদি যথাযথ বিচারের মুখোমুখি তাদের হতে না হয়, তখন দশটা সাধারণ মানুষ মারলে কী হবে এমনটা তাদের চিন্তায় কাজ করবে। এমনটি হলে সমাজে হত্যাকা- প্রবণতা বেড়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত যে রাজনৈতিক হত্যাকা-গুলো সংগঠিত হয়েছে দেশে, তার কোনোটারই কিন্তু বিচারকার্য সেভাবে শেষ হয়নি। একমাত্র বাবার (আহসানউল্লাহ মাস্টার) হত্যার বিচারই নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টেও বিচারকাজ শেষ হয়েছে। এখানে হাইকোর্ট একটা দৃষ্টান্তও রাখতে পারতেন। যারা রাজনৈতিক হত্যাকা-গুলো সংগঠিত করে, সমাজের জন্য তারা ক্ষতিকর। তাদেরকে কোনোভাবেই বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া যায় না।
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় পরিবারের সদস্যরা হতাশ? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে আমাদের মধ্যে কিছুটা হতাশা তো রয়েছেই। ইতোমধ্যে বাবার হত্যার বারো বছর হয়েছে। যাবজ্জীবন থেকে কেউ কেউ খালাস পেয়েছে, দীর্ঘসূত্রিতাও এখানে কাজ করতে পারে। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণ এটা আইনের বিষয়। আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়। কিন্তু যতই আইনি বিষয় থাকুক, পরিবারের সদস্যদের এটা মানতে খুব কষ্ট হয়, কেন এতবছর সময় লাগবে একটা মানুষের হত্যার বিচার পেতে?
রাজনৈতিক হত্যাকা-ের বিচার দ্রুত পেতে কী করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, আমার মনে হয়, যেসব রাজনৈতিক হত্যাকা-ের মামলা রয়েছে, তার জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করে, বিচারকাজটি যদি দ্রুত করা যায়, এ ধরনের রাজনৈতিক হত্যাকা- করার কেউ আর সাহস পাবে না। দুঃসাহসিক এমন চিন্তা করলেও একবার হলেও হত্যাকারীরা ভাববেÑ এমনটি করলে তো রক্ষা নেই। তাই হত্যার পথ থেকে তারা ফিরে আসতে পারে। একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেও মনে করেন জনপ্রিয় সাবেক শ্রমিক নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টারের এই ছেলে।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন