যারা তাদের বানায় তারা মরে না, তারা মারায়
অজয় দাশগুপ্ত
যে বয়সে মানুষ স্বপ্ন দেখে, যে বয়সে মন কেড়ে নেয় তরুণী চোখ, যে বয়সে কেউ ভালোবাসার জন্য দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে লাল কাপড় বাঁধতে পারে, সে বয়সে এরা নেমেছে মানুষ হত্যায়। কী সাংঘাতিক, কী নির্মম এই মানসিকতা?
যৌবনে মানুষ দুটি কারণে মূলত জীবন তুচ্ছ করে বলে জানতাম। একটি কারও জন্য প্রেম আকুলতায়, আরেকটি দেশপ্রেম বা স্বদেশের কারণে। এদের বিয়োগান্তক পরিণতি তাদের রেখে যাওয়া জীবনকে কখনও ছোট করেনি। বরং কোনো কোনো নাম মানুষের মনে চিরজাগরুক হয়ে থেকে গেছে। আমাদের ইতিহাসে সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, মতিউর, আসাদ এমনকি এই সেদিন জান দেওয়া নূর হোসেন তারই প্রতীক। শহীদ রুমীর কথা কে না জানে?
ভেবে পাইনা, এমন দেশে আজ যুবক তরুণরা কারও প্রাণ নেওয়ার জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিচ্ছে। এর একটা সামাজিক ব্যাখ্যা কি জরুরি না?
আমরা যারা রাজনীতি করি না, যারা এদেশের ভালোমন্দে বিচলিত হই, যাদের মুখ ও কলমের মতো নিরীহ কারণে জান দেওয়ার বা যাওয়ার ভয় থাকে, তারা কি এর জবাব চাইতে পারি না?
এমনতো হবার কথা ছিল না। কারা এর জন্য দায়ী? যারা বলে দুনিয়ার ওঠানামা এজন্যে দায়ী, আমি সেটা মানতে পারি না। দুনিয়ার ভালো দিকগুলোর জন্য কেউ জান কোরবানি দেয় না কেন? শুধু কি খারাপটাই তাদের চোখে পড়ে?
যতদিন সমাজ রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এমনটা ঘটত না। যখন থেকে রাজনীতি সমাজ ও দেশকে কব্জা করল, এগুলো বড় ও ব্যাপক হতে শুরু করল তখন থেকে ঘটল অন্য ঘটনা। যৌবন ও তারুণ্যের ভিতর এত রাগ এত ক্রোধ বা পরকালের ভয় অথবা ইহকালের মোহ তাদের তৈরি নয়। যারা তাদের বানায় তারা মরে না। তারা মারায়। এ বোধ বা শিক্ষাটুকু রাজনীতি জানলেও মানে না।
সমাজপতিরা টকশো আর কলাম কলম নিয়ে ব্যস্ত। শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়াকে তুষ্ট করতে পারলেই তাদের কেল্লাফতে। আগে শিশু সংগঠন, যুব সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এসব কাজে হাত লাগাতো। এখন তাদের না আছে জোর না ক্ষমতা। মন খারাপ করি। আমরা যারা আমজনতা তারা কারও কাঁঠাল ভেঙে খেতে জানি না। যারা কাঁঠাল তারাই জানেন কেন এমন হয়। তবে এটা নিশ্চিত, তারুণ্যকে খুনের নেশা ও অপরাধ থেকে না ফেরালে বিজিবি, মিলিটারি, পুলিশে কাজ হবে না।
নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচতে দিনের রাজনীতি কবে শুরু হবে, দেশ ও জাতি বাঁচাতে?
লেখক : সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন