লক্ষ্য উত্তরপ্রদেশের ভোট, মোদি মন্ত্রিসভার রদবদল এ মাসেই
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এ মাসেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদল হতে চলেছে। আর সেই রদবদলের লক্ষ্য নিছক শূন্যপদ পূরণ অথবা ব্যর্থ মন্ত্রীর অপসারণ তথা দপ্তরবদল নয়। প্রকৃত লক্ষ্য আগামী বছরের একঝাঁক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। প্রধানত উত্তরপ্রদেশ। এবং তারই সঙ্গে পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, গুজরাত, মণিপুরেও বিধানসভা ভোট আর ১০ মাস পর। এবং এই রাজ্যগুলি দখলকেই আপাতত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ পাখির চোখ করেছেন। দিল্লির মসনদ সবর্দাই ভায়া লখনউ। এরকমই একটি রাজনৈতিক আপ্তবাক্য স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশে প্রচলিত। কিন্তু জোট রাজনীতির অনুপ্রবেশ তথা প্রভাবের পর সেই প্রবাদটি অনেকটাই পরিসংখ্যানের নিরিখে ফিকে হলেও শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে উত্তরপ্রদেশ যে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার তার প্রমাণ ২০১৪ সালে আরও একবার পাওয়া গিয়েছে। কারণ বিজেপি ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে একাই গরিষ্ঠতার যে ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করে ৩০ বছরের মধ্যে রেকর্ড গড়েছে তার প্রধান অনুঘটক ছিল উত্তরপ্রদেশ। ৮০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি একাই পায় ৭৩টি। যা আশাতীত। লোকসভায় গরিষ্ঠতার থেকেও অনেক বেশি আসন এনডিএ জোটের দৌলতে নরেন্দ্র মোদির কুক্ষিগত রয়েছে। কিন্তু বিগত ২ বছরে তাঁর সরকার তথা দলের প্রধান সমস্যা হিসাবে বারংবার প্রতিভাত হয়েছে রাজ্যসভায় দলের গরিষ্ঠতা না থাকার যন্ত্রণা। একের পর এক বিল আটকে যায়। একের পর এক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়। এবং যে কোনও বিলকেই বিরোধীরা গরিষ্ঠতার অস্ত্রে সিলেক্ট কমিটি কিংবা স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠিয়ে দিয়ে আইন প্রণয়ণের প্রক্রিয়াকে দেরি করিয়ে দিয়েছে। তারই পরিণাম আজও জিএসটি বিল আটকে রয়েছে। এই সমস্যা থেকে স্থায়ী মুক্তি তখনই সম্ভব যখন রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভায় জয়ী হয়ে বিধায়কের সংখ্যা বাড়ানো যাবে। বর্তমান
এটা যদি একটি কারণ হয়, তাহলে অন্য লক্ষ্যটি যতটা রাজনৈতিক, তার থেকে বেশি একটি স্বপ্নপূরণ। স্বপ্ন হল ভারতের সর্বত্র গেরুয়া পতাকা উড্ডীন হওয়া দেখা। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের এই স্বপ্নটির শোভাযাত্রা তখনই সূত্রপাত হওয়া সম্ভব যদি আর্যাবর্তের রাজনৈতিক রাজধানী উত্রপ্রদেশ দখল করা যায়। ১৯৯০ সালের অযোধ্যা আন্দোলন আর ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ভারতীয় রাজনৈতিক মানচিত্রে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল।
কিন্তু কখনওই কেন্দ্রে একক শক্তির সরকার গড়া সম্ভব হয়নি। এবার হয়েছে। তাই পরবর্তী লক্ষ্য অবশ্যই উত্তরপ্রদেশ দখল। আর সেই লক্ষ্য পূরণের তাগিদে সম্প্রতি দলের জাতীয় কর্মসমিতির দুদিনের বৈঠকটির জন্য বেছে নেওয়া হয় এলাহাবাদকে। সেই বৈঠকের পর প্রকাশ্য সমাবেশ থেকেই নরেন্দ্র মোদি বাজিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের ডংকা। এবার ভোট প্রচারে ময়দানে নামার আগে দ্বিতীয় পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আরও বেশি করে উত্তরপ্রদেশের মুখ প্রদর্শন। তাই শোনা যাচ্ছে নতুন চার মুখ আসবে মন্ত্রিসভার রদবদলে। তার ম?ধ্যে একজন উত্তরাখ- থেকে। সম্ভবত দুই বা তিনজনই হবেন উত্তরপ্রদেশের। উচ্চবর্ণের ভোট বিজেপির ক্যাপটিভ অডিয়েন্স বলাই যায়। উত্তরপ্রদেশের সেই ভোট অন্যত্র যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই দলিত অনগ্রসর ভোটব্যাংকে হাত বাড়াতে চাইছেন মোদি। কারণ উত্তরপ্রদেশ জয়ের সবথেকে বড় বাধার নাম মায়াবতী। তিনি ২০১৪’র লোকসভা ভোটে একটিও আসনে জিততে পারেননি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে তাঁর ঝুলিতে সেই দুঃসময়েও ১৯ শতাংশ ভোট। যার সিংহভাগ দলিত। এবার তাই মন্ত্রিসভার রদবদলে দলিত মুখ আসার সম্ভাবনাই বেশি। কেন রদবদল? সরকারি কারণ অবশ্যই আছে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেওয়াল মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে অসমে বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে আজ সেখানে মুখ্যমন্ত্রী। এবং সামাজিক ন্যায় মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী বিজয় সম্পৎকে পাঠানো হয়েছে পাঞ্জাবের দলের দায়িত্ব দিয়ে। কারণ সেখানেও ভোট। এই দুটি শূন্যপদ আছেই। এর পাশাপাশি ২ বছরের বর্ষপূর্তির পর প্রধানমন্ত্রী চাইছেন এবার সরকারের অভ্যন্তরীণ রিভিউ করতে। অর্থাৎ কোন মন্ত্রী ভালো কাজ করেছেন। কাদের কাজ আশানুরূপ নয়। সেই অনুযায়ী অপসারিত হবেন অথবা কোপে পড়বেন কিছু মন্ত্রী। পাশাপাশি কিছু মন্ত্রীকে নির্বাচনের কাজের জন্যই সংশ্লিষ্ট রাজ্যে পাঠিয়ে নতুন মুখ আনা হবে।. এই প্ল্যানে চূড়ান্ত সিলমোহর দেওয়ার জন্য এই সপ্তাহেই আর এস এসের সঙ্গে বৈঠক নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের। মন্ত্রীদের সম্পর্কে সংঘের বক্তব্য জানবেন তাঁরা। পাশাপাশি রদবদল নিয়েও আলোচনা হবে। তাই আপাতত দল ও সরকারের অন্দরে জল্পনা কারা পাশ? কারা ফেল?