বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি
বিশ্বজিৎ দত্ত ও সুজন কৈরী : ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দকে হত্যার হুমকি দেওয়ার পর তার ও মিশনের অন্য সন্ন্যাসীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ নিয়ে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। গতকাল ভারতের দৈনিক আনন্দবাজার এই সংবাদ দিয়েছে। অন্যদিকে গতকাল ঢাকার রামকৃষ্ণ আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ টেলিফোনে জানিয়েছেন, তিনি ঢাকার বাইরে সিলেটে আশ্রমের কাজে রয়েছেন। তবে হুমকির বিষয়টি তদন্তের জন্য থানা ছাড়াও তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। তিনি জানান, ভারতের রামকৃষ্ণ আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অবহিত করেছেন। ভারত থেকেও আশ্রমের সন্ন্যাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তারা আইসিসের হুমকিতে ভীত নন। আশ্রমের স্বাভাবিক কাজকর্মে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ঢাকার আশ্রমে পুলিশ যথেষ্ট নিরাপত্তা দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রামকৃষ্ণ আশ্রমের একজন শিষ্য। বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি ঢাকার রামকৃষ্ণ আশ্রম পরিদর্শন করেন ও পূঁজা দেন।
বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল জানান, রামকৃষ্ণ আশ্রমের বিষয়টি আমি অবগত আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও জানিয়েছি। তবে এই হুমকির পেছনে কাজ করছে জঙ্গিদের কৌশল। তারা অন্যকোনোভাবে সরকারের সঙ্গে না পেরে, হিন্দু সমাজের লোকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।
রামকৃষ্ণ মিশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে মিশনের ১৪টি কেন্দ্র রয়েছে। এগুলি সে দেশে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সেই কাজে বারবার বিঘœ ঘটছে।’ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গত কয়েক মাস ধরেই মিশনের সন্ন্যাসীদের ফোন করে বা চিঠি পাঠিয়ে ‘কোতল করার’ হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মানিকগঞ্জে মিশনের সাটুরিয়া বালিয়াটি মিশনে এর আগে গত ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে চিঠি দিয়ে মহারাজকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি অবিলম্বে কেন্দ্রের গোচরে আনার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আনন্দবাজারের সংবাদে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীরর দফতর মনে করছে, এটা গোটা ভারতের পক্ষেই রামকৃষ্ণ মিশনে হামলার গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়। তারা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। যোগাযোগ রেখে চলেছে বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে। দুই দেশের বিভিন্ন স্তরে গোয়েন্দা তথ্যের আদান-প্রদান চলছে। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক মহারাজ গতকাল দেখা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ গত শুক্রবার জানিয়েছেন, গত কালই ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে সেখানকার রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গেও। ভারতের তরফে জানানো হয়, ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের নিরাপত্তার জন্য হাসিনা সরকারকে সব রকম সাহায্য করা হবে। কী কী কারণে ওই হুমকি দেওয়া হয়েছে বা সেই হুমকি কাদের কাদের কাছ থেকে আসতে পারে, সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রামকৃষ্ণ মিশন সূত্রে জানা যায়।
স্বরূপ এও বলেছেন, ‘আমরা ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলেছি। সকালেও বিদেশ মন্ত্রকের এক দূত ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে এসেছেন।’
এদিকে ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশনে হুমকি হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে, বেদান্ত সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও জাগো হিন্দু নামের দুটি সংগঠন। মানববন্ধনে বেদান্ত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সভাপতি বিজন কুমার বৈশ্য বলেন, বাংলাদেশের প্রগতীশীলদের সঙ্গে নিয়ে মৌলবাদের মোকাবিলা করা হবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম