শিশুদের কাছে হেরে গেল সৌদি, লজ্জিত বিশ্ব-বিবেক!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইয়েমেনের শিশুরা জাতিসংঘের জন্য অর্থ সংগ্রহের এক অভিযান শুরু করেছে। ইয়েমেনের নিষ্পাপ শিশুদের হত্যার কারণে সৌদি সরকারের নাম শিশু-ঘাতক সরকারগুলোর তালিকাভুক্ত করা হলে এই বিশ্বসংস্থায় অর্থ-সহায়তা বন্ধ করা হবে বলে সৌদি সরকার যে হুমকি দিয়েছে তার জবাবে ইয়েমেনি শিশুরা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আইআরআইবি
সামাজিক নানা গণমাধ্যমে পাঠানো ছবিতে দেখা গেছে ইয়েমেনের শিশুরা জাতিসংঘের একটি বড় পতাকার মধ্যে ধাতব মুদ্রা ও কাগুজে নোট রাখছে। রাজধানী সানা’র জাতিসংঘ কার্যালয়ের কাছে এই কর্মসূচি শুরু করেছে তারা। এই কর্মসূচিতে শরিক হয়েছেন সানার মেয়র। এই ঘটনা ঘটল এমন সময় যখন ‘শিশু ও সামরিক সংঘাত’ বিষয়ক জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের হাতে শিশু হত্যার যেসব ঘটনা ও সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে সে বিষয়ে ওই জোট ও জাতিসংঘ যৌথভাবে পর্যালোচনা করবে- এমন একটি প্রস্তাব অনিচ্ছা সত্ত্বে মেনে নিতে বাধ্য হন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। এর আগে সৌদি সরকারকে শিশু-ঘাতক সরকারগুলোর তালিকাভুক্ত করেছিল জাতিসংঘ। কিন্তু সৌদি সরকার ও তার মিত্রদের প্রবল চাপ এবং বিশেষ করে জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রমে চাঁদা বন্ধ করে দেয়ার হুমকির মুখে বান কি মুন ওই কালো-তালিকা থেকে সৌদি সরকারের নাম সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। ‘অযৌক্তিক চাপের মুখে’ রিয়াদকে আপাতত সাময়িকভাবে ওই তালিকা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে বান কি মুন দাবি করেছেন!
বান কি মুনের সাহসহীনতার লজ্জা ঢাকতে বা কাপুরুষোচিত পিছুটানের প্রতিবাদে ইয়েমেনের শিশুরা যে পদক্ষেপ নিল তাতে যে কেবল সৌদি সরকারই নৈতিক দিক থেকে পরাজিত হল তা নয় এতে বিশ্ব-বিবেকও হার মানল আরব বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ইয়েমেনের শিশুদের কাছে। জাতিসংঘের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল গত এক বছরে ইয়েমেনের যুদ্ধে নিহত ৭৮৫ শিশুর ৬০ শতাংশেরই মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল সৌদি সরকার।
ইয়েমেনের এক শিশু জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের কাছে লেখা এক চিঠিতে তাকে সাহস যোগানোর চেষ্টা করেছে। শিশুটি লিখেছে, ‘সৌদি আরবকে ভয় পাবেন না। কারণ, ইয়েমেনে গণহত্যা চালাচ্ছে সৌদি আরব জাতিসংঘ নয়। … আমি আমার নাম লিখছি না। কারণ, সৌদি আরব আমাকে হত্যা করবে। আর আমি মৃত্যু পছন্দ করি না।… আমার বন্ধুরা ও আরও অনেকে জাতিসংঘের জরুরি শিশু-তহবিল বা ইউনিসেফের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে রাজি হয়েছে। কারণ, সৌদি আরব বলেছে, তারা ইউনিসেফকে অর্থ সাহায্য দেয়া বন্ধ করে দেবে।’
সৌদি সরকার গত বছরের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে ইয়েমেনে হামলা শুরু করে। গণজাগরণের মুখে ইয়েমেনের সংসদে পদত্যাগকারী ও পলাতক সাবেক প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য এই হামলা শুরু করে রাজতান্ত্রিক সৌদি সরকার। রিয়াদের ক্রীড়নক এই হাদিকে সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন সরকার, ইসরায়েল ও তাদের আঞ্চলিক সেবাদাসতুল্য আরব সরকারগুলা। সৌদি-নেতৃত্বাধীন এই সরকারগুলোর জোট বাহিনীর নির্বিচার হামলায় কয়েক হাজার শিশু ও নারীসহ প্রায় সাড়ে নয় হাজার ইয়েমেনি নিহত হয়েছে। আর আহত হয়েছে দেশটির অন্তত ১৬ হাজার নাগরিক। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ