ইসলামের নামে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ হারাম
লাখো আলেম স্বাক্ষরিত ফতোয়া
রিকু আমির : ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ হারাম বলে ঘোষণা এলো দেশের লাখো আলেম স্বাক্ষরিত ফতোয়া থেকে। গতকাল শনিবার সকালে আলেমদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ফতোয়া প্রকাশ করেন স্বাক্ষর গ্রহণের প্রধান উদ্যোক্তা বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, জঙ্গিরা জিহাদের নামে, শহিদ হওয়ার নামে, জান্নাত পাওয়ার জন্য, হুর-পরী পাওয়ার জন্য যা করছেÑ তা জাহান্নামের পথ, হারাম। তারা বলে থাকে, তারা নাকি ইসলামের পথে জিহাদ করছে। কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রমাণ দিয়েছি, এটা সন্ত্রাসী কর্মকা-। জিহাদ আর সন্ত্রাস এক জিনিস নয়। তারা আত্মঘাতী মরণকে শহিদী মরণ বলছে। কিন্তু আত্মহত্যা ইসলামে এতটা নিন্দনীয়, কেউ যদি আত্মঘাতী হয়, শরিয়তে তার জানাজা না পড়ার বিধানও আছে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, আমি বিতর্কিত হতে পারি। কিন্তু এক লাখ আলেম তো বিতর্কিত নয়। এখানে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব বাবুনগরীর স্বাক্ষর রয়েছে। বিতর্কিত হলেই যে কারও কথা মানা যাবে না বা মানতে বাধা, বিষয়টি এমন নয়।
এই ফতোয়ার কপি কাবা শরিফের ইমামকে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, এজন্য প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ হয়েছে। তবে তাকে আনতে হলে সরকারিভাবে দাওয়াত দিতে হবে। এজন্য সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে দাবি জানাচ্ছি।
গত ৩ জানুয়ারি থেকে স্বাক্ষর গ্রহণ অভিযান শুরু হয়, ৩১ মে শেষ হয়েছে। এ ফতোয়ার সমর্থনে ঢাকা বিভাগ থেকে ২৮ হাজার ৫৬, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ২০ হাজার ৬৮১, খুলনা বিভাগ থেকে ১৪ হাজার ২৫০, রংপুর বিভাগ থেকে নয় হাজার ৭৭০, ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে আট হাজার ৮৯২, রাজশাহী বিভাগ থেকে ২ হাজার ২০০, বরিশাল বিভাগ থেকে ১ হাজার ৪৫০, সিলেট বিভাগ থেকে ১৬ হাজার ২২৫ জনের মোট ১ লাখ ১ হাজার ৫২৪ জনের স্বাক্ষর সংগৃহিত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার নারী উলামার স্বাক্ষর রয়েছে।
ফরীদ উদ্দীন জানান, ৩০ খ-ের এই ফতোয়ার একটি করে কপি জাতিসংঘ, ওয়াইসি, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার পরিকল্পনার পাশাপাশি জেলায় জেলায় সম্মেলন, ট্রেনযাত্রা, পথযাত্রা, ফেসবুক-ট্যুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যম কাজে লাগানোর পরিকল্পনাও আছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এই ফতোয়া জঙ্গিবাদ দমনে কতটুকু সফল হবেÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বেশ দৃপ্তকণ্ঠে তিনি বলেন, লক্ষ অস্ত্রের চেয়েও ফতোয়ার শক্তি অনেক ধারালো। মনো চেতনা মানব কর্মের মূল উৎস। সঠিক ফতোয়া সেই মনো চেতনাকে শুদ্ধ করে, আলোড়িত করে, মানবতাবাদী বানায়। মুসলিম সমাজে ফতোয়ার ব্যাপকতা ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব অনস্বীকার্য। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম