অথচ ১২ দিনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ২০ স্বস্তি নেই জনমনে
দীপক চৌধুরী ও এম কবির : একের পর এক ভিন্নমতাবলম্বী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিদেশি নাগরিক, শিক্ষক খুন, এসপির স্ত্রী হত্যা নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। ৬ জুন চট্টগ্রামে জঙ্গি কায়দায় পুলিশ অফিসার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা করার পরই অপরাধীদের গ্রেফতার করতে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের তৃপ্ততা প্রকাশ করলে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি সরকার।
১০ জুন শুক্রবার থেকে অভিযানও শুরু করেছে পুলিশ। এ অভিযানে সাড়ে ১২ হাজার ব্যক্তিকে আটকের খবর পাওয়া গেছে কিন্তু একই সময়ে ‘কথিত’ বন্দুকযুদ্ধে ২০ জন নিহত হয়েছে।
তবে এ অভিযান সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ, গবেষক, অধ্যাপক, অপরাধবিজ্ঞানীদের মতেÑ মূল হোতাদের আড়াল করতেই বন্দুকযুদ্ধ ঘটনা হয়েছে।
কোনো মাস্টার মাইন্ডকে আড়াল করার জন্যই টার্গেট কিলিং ও হামলার সঙ্গে জড়িতদের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যা করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকজন অপরাধবিজ্ঞানী। অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, যাদেরকে ধরা হলো, তাদেরকে ক্রস ফায়ারে মেরে ফেলার মধ্যদিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি কোন ‘মাস্টার মাইন্ডকে’ আড়াল করতে চাচ্ছে কিনা এটাও একটি প্রশ্ন। এর মধ্যদিয়ে আমরা কোন উত্তর তো পাচ্ছিই না, বরং রহস্যগুলো আরও বেড়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশের (টিআইবি) সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, মানুষ আমাদের বলছেÑ ক্রসফায়ার হওয়ার পরে আপনারা কথা বলছেন কেন? যাদের ক্রসফায়ারে দেওয়া হচ্ছে, তারা অন্যের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। অতএব তাদের মানবাধিকার নেই।
তবে, বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলছেন, এক সপ্তাহের অভিযানে অনেকটাই সফল তারা। তরুণ প্রজন্ম যাতে জঙ্গিবাদের দিকে না ঝুঁকে সেজন্য সামাজিক প্রেক্ষাপট গড়ে তোলা উচিত। এক সপ্তাহের অভিযানে নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হয়নি দাবি করে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, বিশেষ অভিযান শেষ হলেও জঙ্গিবাদ রোধে কঠোর মনোভাব নিয়ে কাজ করবে তার বাহিনী।
শুক্রবার রাতে মাদারীপুরে শিক্ষক হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ফাইজুল্লাহ ফাহিম রিমান্ডে থাকা অবস্থায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতদের মধ্যে জঙ্গি, ছিনতাইকারী, নারী পাচারকারী, ডাকাত ও চরমপন্থি দলের সদস্যরা রয়েছেন।
১৭ জুন মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কামাল হোসেন (৩৮) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শনিবার ভোরে সদর উপজেলার মাগুরা-যশোর সড়কের মঘিরঢাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, কামাল একজন ডাকাত? ছিলেন। কামালের বাড়ি মঘিরঢালের কাছে শ্যাওলাডাঙ্গা গ্রামে। বাবার নাম আফসার হোসেন।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজমল হুদার জানান, দিবাগত রাত তিনটার দিকে কামাল ও তার সহযোগীরা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ডাকাতির চেষ্টা করছিলেন। টহল পুলিশ সেখানে গেলে ডাকাতেরা গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলি থেমে গেলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কামালের লাশ উদ্ধার করে। স্থানীয় লোকজন তাকে শনাক্ত করেন। ওসি জানান, ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় একটি শটগান, দুটি গুলি, একটি রামদা, গাছ কাটার একটি করাত ও এক জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়েছে। কামালের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগে মামলা আছে। লাশ সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ১৬ জুন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে র্যাবের সঙ্গে ‘কথিত’ বন্দুকযুদ্ধে এক যুবক নিহত হয়েছে। শেরেবাংলা নগর এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। নিহত যুবকের নাম আইদুল ওরফে মামা সাগর। তাকে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী’ এবং কারওয়ান বাজারের একজন ‘শীর্ষ চাঁদাবাজ’ বলে দাবি করেছে র্যাব। এ ঘটনায় অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার এবং দুই র্যাব সদস্য আহত হয়েছে। সম্পাদনা : লিয়াকত আমিনী