পুরস্কারঘোষিত দুর্ধর্ষ ৬ জঙ্গির ৫ জনই ধরাছোঁয়ার বাইরে
আজাদ হোসেন সুমন : ঢাকঢোল পিটিয়ে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১৯৪ জঙ্গিকে গ্রেফতার করলেও পুরস্কারঘোষিত দুর্ধর্ষ ৬ জঙ্গির মধ্যে ৫ জনই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। উল্লিখিত ৫ ভয়ঙ্কর জঙ্গিকে গ্রেফতার করা না গেলে দেশে হত্যাকা- ও নাশকতার আশঙ্কা থেকেই যায় বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। ওই জঙ্গিরা সুমন, শরিফ, সেলিম, সিফাত, রাজু ও সাজ্জাদ নামে পরিচিত।
রাজধানীর বিমানবন্দরের এলাকা থেকে গত বুধবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল সুমনকে গ্রেফতার করে। গত ৩১ অক্টোবর লালমাটিয়ায় প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে প্রকাশক আহমেদ রশিদ টুটুল ও আজিজ সুপার মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনার কার্যালয়ে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দীপন মারা যান এবং টুটুলসহ তিনজন গুরুতর আহত হন। এরপর এসব ঘটনায় মোহাম্মদপুর ও শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায়সহ ১০ জন লেখক, ব্লগার ও ভিন্নমতাবলম্বী খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত ১৯ মে সুমনসহ আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের ছয় সদস্যের নাম ও ছবি ঢাকা মহানগর পুলিশের অফিসিয়াল সাইটে প্রকাশ করেছিল ডিবি। এতে তথ্যদাতাদের জন্য দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
ডিএমপির এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, এবিটির ছয় জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চাওয়া হলেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই জঙ্গিরা দেশের কোথাও না কোথাও লুকিয়ে আছে। জনগণের উচিত জননিরাপত্তার স্বার্থে সঠিক তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করা। তা না হলে এরা কথিত জিহাদের নামে মানুষকে বিপদে ফেলতেই থাকবে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানিয়েছে, পলাতক ওই ৫ জঙ্গি আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সক্রিয় সদস্য। এরা প্রশিক্ষিত, আগ্নেয়াস্ত্র চালনা এবং বোমাসহ বিভিন্ন বিষয়ে এরা বিশেষ পারদর্শী। এছাড়াও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মগজ ধোলাই করে নিজেদের দলে ভেড়াতেও এরা অভিজ্ঞ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, পুরস্কার ঘোষিত জঙ্গিদের সম্পর্কে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই ফোন করে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই দাবি করেছে, ওই জঙ্গিদের তারা আগে অনেকবার দেখেছে। কেউ কেউ বলছে, এরা ইসলামী বয়ানের নামে সাংগঠনিক দাওয়াতও দিয়েছে তাদের। তবে তারা যে জঙ্গি দলের সদস্য, এটা আগে জানা ছিল না তাদের। আবার দু-একজনের দাবি, ওই জঙ্গিরা বাসা ভাড়া নিয়ে এমনভাবে অবস্থান করেছিল যে কখনও মনে হয়নি তারা জঙ্গি। তখন কোনো কিছু না বুঝেই তাদের বাসা ভাড়া দেন তারা। তবে গণমাধ্যমে ও ডিএমপির ওয়েবসাইটে তাদের ছবি প্রকাশ করার পর তারা বুঝতে পারেন ওরা সবাই ভয়ঙ্কর জঙ্গি।
অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুরস্কারঘোষিত উল্লিখিত ৫ জঙ্গিকে দ্রুত গ্রেফতার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ তারা আত্মগোপনে থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও স্পর্শকাতর স্থানে হামলা চালানোর পাশপাশি টার্গেট কিলিংয়েও লিপ্ত হতে পারে।
আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, ৭ দিনের বিশেষ অভিযানে প্রায় ২ শ জঙ্গি ধরা পড়েছে। তার মধ্যে পুরস্কারঘোষিত একজন রয়েছে। বাকি ৫ জনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম এ ব্যাপারে মাঠে রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, খুব শিগগিরই পলাতক ৫ জনও ধরা পড়বে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম