বিএনপি এখনই বড় আন্দোলনে যা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বিশেষ অভিযানে বিএনপির প্রায় সাত হাজার নেতা কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে এমনটি দাবি করা হয়েছে বিএনপির তরফ থেকে। কিন্তু তা হলেও এই গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপি কোন আন্দোলনে যাবে না। বিএনপির সিদ্ধান্ত ছিলো তারা এখন কেবল সরকারের সমালোচনা করবে। এই জন্য সংবাদ সম্মেলন করবে, বিবৃতি প্রদান করবে।। ইফতারপার্টিতে বিভিন্ন কথা বলবে। পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী কথা বলবেন। সেই হিসাবে তারা এগুচ্ছেন। তবে গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে তারা আর সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি। বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন। পরে যদিও রাজধানীতে ওই সমাবেশের কর্মসূচী দুদিন পিছানো হয়। বিএনপির কাছে খবর রয়েছে এটা সরকারের পাতানো ফাঁদ। সেই ফাঁদে পা দেওয়া ঠিক হবে না। এই জন্য বিএনপি আরো বেশি ধীরে চলা নীতি অনুসরণ করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, বিএনপি এখন ধীরে চলো নীতি অনুসরন করছে। কোন ধরনের জোরালো আন্দোলনে যেতে চাইছে না। বিএনপি মনে করছে তারা যদি গুপ্ত হত্যা, টার্গেট কিলিং, গণ গ্রেপ্তার ও বিএনপির নেতা কর্মীদের দমন করার জন্য সরকার যে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছেন এই জন্য বিএনপি যাতে আন্দোলনে নামে সেই চেষ্টা করে। এটা তাদের একটা কৌশল। আমরা সেটা বুঝে গেছি। এই কারণে কোন আন্দোলনে যাচ্ছি না। তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলনের কর্মসূচী দিলেই সরকারের লোকেরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আরো সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করবে। সেই সুযোগ দেওয়া হবে না। এই কারণে বিএনপি যখন মনে করবে এমন পরিবেশ হয়েছে আন্দোলন করার তখনই নামবে। এবার জনগণ যদি এত কিছুর পরও কোন প্রতিবাদ না করে তাহলে তারা আরো কিছু সময় অপেক্ষা করবে।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের কৌশল এখন আমাদের জানা হয়ে গেছে। এই কারণে সরকারের কোন পাতা ফাঁদে বিএনপি আর পা দিবে না। সরকার বিএনপি ও জামায়াতকে নিয়ে সারক্ষান যাতে মানুষ সমালোচনা করে সেই চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে জনগণের মধ্যে বিএনপির প্রতি একটি নেতিবাচক ধারনা তৈরিরও চেষ্টা রয়েছে। কিন্তু বিএনপি মাঠে না নামার কারণে সরকারের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এই কারণে সরকার সম্প্রতি সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযান করে তারা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জঙ্গীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ফলে তাদের এই অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রায় ১৫ হাজার গ্রেপ্তার হয়েছে, এটা সম্পূর্ণ আইনের বিরোধী। কারণ কয়েক দিন আগে হাই কোর্ট থেকে রায় দিয়েছে যে বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। এত হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিনা ওয়ারেন্টে। হাই কোর্টের রায়ের নির্দেশনায় বলা হয়, আটকাদেশ দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলে গিয়েও সাড়া পায়নি। ২৪ মে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ৫৪ ধারায় অর্থ্যাৎ বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও ১৬৭ ধারা অর্থ্যাৎ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা সর্বোচ্চ আদালত থেকে করে দেওয়া হবে।
ফখরুল ইসলাম বলেছেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এরমধ্যে জঙ্গি ১৩৫ জন। বাকি ১৫ হাজার কারা? বাকিরা ধর্মপ্রাণ মানুষ। তিনি বলেন, সরকারের এই অভিযান সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। গুপ্ত হত্যাকারীেেদর কেউ অভিযানে কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ার ব্যাপারে বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার একটা হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি কেন? এই প্রশ্ন গোটা জাতির বিবেকবান মানুষের। কিন্তু এর কোন উত্তর নেই সরকারের কাছে। কারণ সরকার জানে কারা এই কাজ করেছে। ক্রসফায়ারে আমাদের ভাইদেরকে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা রকমের চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টা সফল করার জন্য সব দোষ বিএনপির উপর দেওয়ার চেষ্টা করছে। গুপ্ত হত্যা, টার্গেট কিলিং, জঙ্গীবাদ কোন ঘটনা হলেই বিএনপির দোষ দেয়। কিন্তু সরকার যে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে সেখানে ১৯৪ জন জঙ্গী ধরায় এটা প্রমাণ হয়ে গেছে সরকার দেশে জঙ্গী আছে বলে যেটা প্রচার করে তা সত্য নয়। এগুলো করে তারা দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করছে। এখন বিএনপি কোন আন্দোলন করছে না। আবার মাঠে নেই এই কারণে সরকারের সহিংসতা করার সুযোগও হচ্ছে না। আমরা মাঠে থাকলেই সেটা করে আমাদের উপর দোষ দিবে। এই কারণে আমরা একন কোন আন্দোলনে যাচ্ছি না। সময় ও সুযোগ বুঝেই আন্দোলনে যাবো। তবে জনগনের মধ্যে খুব দ্রæতই আন্দোলনের ডাক আসবে। আন্দোলনে যাওয়ার মতো সব ধরনের পরিস্থিতিই দেশে আছে। যে কোন সময়ে এর বিস্ফোরণ ঘটবে।
উল্লেখ, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য সরকার বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানে প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে সন্দেহভাজন জঙ্গি ১৯৪ জন। বাকিরা বিভিন্ন মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি বলে পুলিশ দাবি করে। কিন্তু বিএনপি এটা মানতে চাইছে না। তারা মনে করছেন, গ্রেপ্তারের বেশিরভাগ নেতা ব্যক্তি তাদের দলের নেতা কর্মী । এদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। তাদেরকে আগের কোন কোন মামলায় অজ্ঞাত আসামীর তালিকায়ও ফেলা হবে। মির্জঅ ফখরুলের অভিযোগ আমাদের দলের অনেক নেতা কর্মীকে সম্পূর্ন রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে কোন মামলাও নেই।
এখনই বিএনপি আন্দোলনে যাবে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপাতত আমরা বড় ধরনের আন্দোলনে যাচ্ছি না। তবে আমরা অপেক্ষা করছি। সরকার ঙেযসব কাজ ক্ষমতায় থাকার জন্য করছে এই গুলো করে শেষ রক্ষা হবে না। কারণ সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য বিএনপিকে দমন করে রাখতে ও কোন ঠাসা করার না বৃথা চেষ্টা করছে। এতে কোন লাভ হচ্ছে না। দেশে বিদেশ সবাই সরকারের এই সব দেখে হতাশ।