রৌদ্রনীল ঘোষ : বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাম্প্রতিক হত্যাকা-ে ভারতকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, শরণার্থীদের ব্যাপারে তারা কি করবে। এই হত্যাকা-ে আতঙ্কিত সংখ্যালঘুদের অনেকেই ভারতে শরণার্থী হিসেবে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। বিষয়টি মানবিক হলেও এর পরিণতিও ভারতীয় নেতৃত্বকে ভাবতে হবে।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ৭২ সালের প্রথম সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করে। জাতির জনকের নেতৃত্বাধীন সরকার ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশ ইসলাম পন্থার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। অতঃপর সংবিধান পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম হয় ইসলাম। ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশের অস্তিত্বে অবিশ্বাসীরা অতঃপর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ পান। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুরা নিপীড়নের শিকার হতে শুরু করে। টাইমস অব ইন্ডিয়া
১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু ছিল ২৫ শতাংশ। ১৯৭১ সালে হ্রাস পেয়ে ১৮ শতাংশে দাঁড়ায়। বর্তমান বাংলাদেশে হিন্দু ১০ শতাংশ। এটি খুবই স্বাভাবিক যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ভারত বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি অগ্রাহ্য করতে পারে না।
যদি বাংলাদেশের ইসলামপন্থিরা উপলব্ধি করে যে ভারত সংখ্যালঘুদের গ্রহণ করতে আগ্রহী তবে তারা বাংলাদেশের সর্বস্তরে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব গ্রহণ ও হুমকি বাড়াতে মেতে উঠবে। ইসলামপন্থিরা অমুসলিম ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী মুসলমানদের হাত থেকে পরিত্রাণ চায়। তারা বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিস্তান রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় । কিন্তু এতে ভারতকে ফল ভোগ করতে হবে। কারণ ভারতকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অতঃপর কঠিন অবস্থা মোকাবিলা করতে হবে। বরং নয়াদিল্লির জন্য এটা খুবই ভালো যে ভারতের বন্ধুসুলভ আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন দান, তাদের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থা নিয়ন্ত্রণ এবং বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ভারতের কৌশলগত অগ্রাধিকার হলো ধর্ম নিরপেক্ষ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার জঙ্গিদের ধরতে গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযান বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের একটা ধারণা দিতে সক্ষম হবে।
এই সবগুলো বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ভারতকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের গ্রহণ করার জন্য অতিরিক্ত আগ্রহ দেখানো উচিত নয়। ভারত সরকার সেদেশে আসা সংখ্যালঘুদের ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যত শরণার্থী এসেছে তাদের ভারতে থাকার সুযোগ দিয়েছে সরকার। তবে বাংলাদেশি সকল সংখ্যালঘুদের গ্রহণে ভারত প্রস্তুত এমন ধারণা দেওয়া ঠিক নয়। তার পরিবর্তে ভারতের উচিত বাংলাদেশ সরকার যেভাবে ইসলামপন্থিদের মোকাবিলা করছে তা সমর্থন করা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধানে বাস্তবসম্মত অবস্থান নেওয়া। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ
অনুবাদ : কায়কোবাদ মিলন ও এম রবিউল্লাহ