৭০০ খাসিয়াকে বাংলাদেশ ছাড়ার নির্দেশ,মোদির হস্তক্ষেপ দাবি
মাছুম বিল্লাহ ও গাজী মিরান : সাত দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে বসবাস করে আসা সাত শতাধিক খাসিয়াকে স্থানীয় প্রশাসন এবার দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
শনিবার উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক যুগশঙ্খের খবরে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের নাহরপুঞ্জিতে বসবাসরত খাসিয়ারা ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়া ওইসব খাসি মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মেঘালয়ের রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে খাসিয়াদের সংগঠন খুন হিনিউট্রেপ ন্যাশনাল অ্যাওয়াকেনিং মুভমেন্ট (কেএইচএনএএম) ।
এই দাবিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমাকে স্মারকলিপি পাঠিয়ে সংগঠনের সভাপতি পি সাইবন বলেন, দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশে পৈতৃক ভিটেতে বসবাস করা খাসি পরিবারগুলো যাতে সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারে, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মোদির হস্তক্ষেপ দাবি করছি। শিগগিরই ওই জমি না ছাড়লে তাদের বলপ্রয়োগে উচ্ছেদ করা হবে বলেও নির্দেশ বলা হয়েছে। জুনের প্রথম সপ্তাহে এই নির্দেশ দিয়ে ৭ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন প্রশাসন। তাদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে এখন প্রতি মুহূর্তে উচ্ছেদের ভয় করছে ৭০০ খাসি পরিবার।
যুগশঙ্খের খবরে বলা হয়, দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে বসবাস করে আসা পরিবারগুলোকে হঠাৎ করে তাড়ানোর সিদ্ধান্ত সত্যিই আশ্চর্যের। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক কথা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন কেএইচএনএএমস সভাপতি। বাংলাদেশে বসবাসরত স্থানীয় খাসিয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমাকেও ব্যবস্থা দাবি জানানোর কথা বলা হয়েছে।
এদিকে বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজার জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়কে চা-বাগানে তাদের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। ইতোমধ্যে তারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনেও নেমেছেন।
জেলা প্রশাসন বলছে, চা-বাগানে সরকারের খাস জমি উদ্ধারের পদক্ষেপ নেওয়া হলেও খাসিয়া সম্প্রদায়ের ক্ষতি হবে এমন কিছু করা হবে না।
এদিকে, চা-বাগান কর্তৃপক্ষ বলছেন, বাগানের জায়গা ছেড়ে দিলে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিব আমরা।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুর খাঁন ইউনিয়ন থেকে অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্তের কাছাকাছি একটি চা-বাগানের মধ্যে দুটি গ্রামে বসবাস করছে প্রায় ৮০টির মত খাসিয়া বা খাসি পরিবার। পরিবারগুলোর অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই এই গ্রামে তাদের বসবাস। কিন্তু এই স্থান থেকে অনেকদিন ধরে তাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে। সব শেষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল যার সময় শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগে।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের একজন সদস্য দিবারমিন বলেন, প্রশাসন থেকে যে উচ্ছেদ নোটিস দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে যাবেন তারা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে সরকারে খাস জমি যদি ভোগ না করতে পারি, তাহলে ভোগ করবে কারা? ব্রিটিশ আমল থেকে এই পুরো অঞ্চলে খাসিয়ারা বসবাস করছে। বর্তমানে ওই স্থানে প্রায় ৮০টি পরিবার আছে।
দিবারমিন বলেন, ২০০৮ সাল থেকেই সরকারের সাথে এই সমস্যা শুরু হয়। এমনকি এ নিয়ে হামলার ঘটনাও ঘটেছিল এবং মামলাও হয়েছিল।
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলছেন, যেহেতু জায়গাটি নিয়ে আগে থেকেই মামলা আছে তাই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া বা আদালতের কোনো নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত খাসিয়া সম্প্রদায়ের কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না।
তবে খাসিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা বলছেন, নিজেদের বসবাসের স্থান এবং পান চাষের জমি কোনোভাবেই ছেড়ে দিব না। উচ্ছেদের নোটিস পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং বসবাসের অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ