আশা বনাম হতাশা
ইমরান খান: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বোঝা কি এটি নিয়ে নানা জনে নানা মন্তব্য করেন। কেউ বলেন জনসংখ্যা, কেউ বলেন সম্পদের অভাব আবার কেউ অভিযোগ করেন দুর্নীতিকে। কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা এর কিছুই নয়, বরং এটি বাংলাদেশের মানুষের নেতিবাচক মানসিকতা। এদেশের জনগণ আশাহীন হয়ে পড়ে এবং খুব সহজেই হতাশায় ডুবে যায়।
যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়, দেশের সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে তারা কি চিন্তা করছেন? বেশিরভাগ মানুষ নেতিবাচক ভাবে বলবেন, দেশ কোন দিকেই যাচ্ছে না। যদি তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়, তারা বলবেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই দেশ থেকে তারা চলে যাবে। বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সবচাইতে বড় ভক্ত বলে পরিচয় দেন। কিন্তু বাংলাদেশ দল যখন প্রথম খেলা শুরু করেছিল তাদের অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছিল, এমনকি তাদের বলা হয়েছিল, তারা যেন ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দেয়। আমরা কি এখনো সেই খারাপ পরিস্থিতিতে আছি?
প্রথমে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দেখা যাক। যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল তখন আমাদের অর্থনীতি খুব জোরালোভাবে সঞ্চালিত হয়েছে। এমনকি গত দুই বছরে রাজনীতিক অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি ৬ শতাংশেরও বেশি ছিল। আমরা ‘নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশ’ এর মর্যাদা পেয়েছি। সব অর্থনৈতিক সূচকে বলা হয়েছে সামনের বছরগুলোতেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা কি এই কৃতিত্বের গর্ব কিছুটাও নিতে পারি না?
আমরা ২০০৯ সালের পেছনে ফিরে যাই এবং লোডশেডিং এর কথা ভাবি। প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল নিত্যনৈমেত্তিক ব্যাপার। বহু স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ফলে এই পরিস্থিতির খুব তাড়াতাড়ি পরিবর্তন হয়েছে। কিছু মানুষ স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার সাথে একমত না ও হতে পারেন কিন্তু বেপরোয়া অবস্থায় বেপরোয়া পদক্ষেপই প্রয়োজন। তবে আমরা এখন দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সমাধান পেয়েছি, বিতর্কিত স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার উপর আর নির্ভরশীল নয়। আমরা যে কোন ভয়াবহ লোডশেডিং মোকাবেলা করতে পারি কিন্তু আমরা এখনও হতাশায় ভুগছি।
আমরা আমাদের দেশের অবকাঠামো নিয়ে অনেক উদ্বিগ্ন । আমরা দেখেছি বর্তমানে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আমরা অনেক ফ্লাইওভার ্ও ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ হতে দেখেছি। গুরুত্বপূর্ণ হাইওয়েগুলো চার লেনে পরিণত করা হয়েছে এবং বেশির ভাগ মেগা প্রকল্প যেমন-পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল ইত্যাদির কাজ চলমান যা সম্পন্ন হলে দেশের পরিস্থিতি সম্পুর্ণরুপে বদলে যাবে। তবে এখনও অনেকেই এই মেগা প্রকল্পগুলোর নেতিবাচক মানসিকতা খূঁজে বের করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
আমি কখোনোই বলছি না যে আমাদের কোন নেতিবাচক দিক খোঁজা উচিত নয়। ক্রুটি-বিচ্যুতি আরো ভাল হয়ে উঠতে সাহায্য করে এবং সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু সমালোচনা গঠনমূলক হতে হবে। আমি আগেও বলেছি যে, কোন কিছু পুরোপুরি নিখুঁত হওয়া অসম্ভব। যখন সমালোচনা করা হবে, তখন এটি বের করা উচিত যে কিভাবে এটি আরো ভাল হয়ে উঠতে পারে এবং কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা দরকার। আমাদের শুধুমাত্র কোন পদ্ধতির নেতিবাচক দিকগুলো খূঁজতে সমালোচনা করার পথ পরিহার করা উচিত । এটি নেতিবাচক মানসিকতার পথ, এই পথ রাগ, হতাশা এবং বিভক্তি দ্বারা পরিপূর্ণ এবং এই পথে কোন ভাল কিছু অর্জন করা যায় না।
তবে সাফল্যের উদারহণ মানে এই নয় যে আমি বলছি আমাদের দেশ নিখুঁত পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পরিস্থিতি নিখুঁত এর কাছাকাছি। বিচক্ষণ ব্যক্তি এটি উপলদ্ধি করতে পারবেন। আমরা অবশ্যই অনেক কঠিন পরিস্থিতি এবং প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হয়েছি। এবং সামনের দিনগুলোতে আরো কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। কিন্তু শুধুমাত্র পরিস্থিতির মোকাবেলা করার জন্য আমাদের কি আশা হারিয়ে ফেলা উচিত?
কখোনোই না। এই সব সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা অগ্রগতি সাধন করছি এবং আমি খুব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের দেশের সবচেয়ে ভাল দিনটি অপেক্ষামান। শুধুমাত্র দরকার আমাদের সকলের বিশ্বাস এবং আশা। কারণ বিশ্বাস এবং আশা খুব সহজেই পর্বতসমান বাধা মোকাবেলা করতে পারে।
সবশেষে, আমরা সব হতাশা এবং ক্রোধের পথ ছেড়ে দিয়ে আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিশ্বাস করব।
গত কয়েক বছরে আমাদের দেশের ইতিবাচক অর্জনগুলোকে দেখুন। চিন্তা করুন, আমাদের দেশের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে। যা আমাদেরকে সব নেতিবাচক দিক থেকে পরিত্রাণ দিবে এবং সব বিভেদ ভুলে আমারা দেশের মঙ্গলের জন্য একসাথে কাজ করব। কোন লক্ষ্যই অপূর্ণ থাকবে না, কোন উদ্দেশ্যই বিশাল হবে না আমরা যদি একসাথে কাজ করি। তাই চলোন বেছে নিই আশার পথ এবং মোকাবেলা করি ২১ শতকের চ্যালেঞ্জকে। সম্পাদনা : আবু সাইদ
বিডিনিউজ থেকে অনুবাদ করেছেন লিহান লিমা