অভিনন্দন, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ
আমার ধারণা ছিল, জঙ্গিবাদ হারাম ঘোষণা করে লক্ষাধিক আলেমের স্বাক্ষর সম্বলিত ফতোয়া প্রকাশের জন্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে প্রগতিশীলরা অভিনন্দন জানাবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দনের বন্যা বয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে স্মরণকালের এই বৃহত্তম উদ্যোগ আমাদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়নি। আমরা এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত নই। পত্রিকাগুলো এই সংবাদটিকে লিড করেছে এমনও নয়। বিকেলে এক বন্ধু বললেন, মাওলানা মাসউদ তো আওয়ামী লীগের দালাল, তার এই উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না। মাওলানার এই উদ্যোগের নেতিবাচক সমালোচনাও করছেন অনেকে ফেসবুকে।
আমি ভাবি, খারাপ তো কিছু করেননি মাওলানা। জঙ্গিদের ভয়ে সারা দেশের মানুষ যখন ভীত, গোপন আতঙ্ক যখন তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, একটা মানুষও যখন নিরাপত্তা বোধ করছে না, তখন তার এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখা যেতে পারে। এ দেশের ধর্মমুখী মানুষদের মধ্যে সামান্য হলেও এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্তত একজন হলেও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। কারণ ধার্মিকরা ধার্মিকদের কথা আমলে নেয়। আমরা যারা প্রগতিশীল বা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করি, আমাদের কথা তারা আমলে নেয় না। কারণ আমাদেরকে তারা গোনে না।
পত্রিকায় যতই কলাম লিখি, ফেসবুকে যতই বিপ্লব করি, টকশোতে যতই গলা ফাটাই, তাদের কিচ্ছু যায়-আসে না। কারণ তাদের দৃষ্টিতে আমরা কাফের, মুরতাদ, নাস্তিক, শয়তানের ভাই, ইন্ডিয়ার দালাল ইত্যাদি। কিন্তু মাওলানা মাসউদকে তারা এসব উপাধি দিতে পারবে না। কারণ তিনি মাওলানা।আমি মনে করি, দেশের প্রত্যেক পাড়ায় পাড়ায় সকল ধর্মের, সকল মতের মানুষদের নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যেকোনো উপায়ে হোক এই প্রতিরোধ জরুরি। গ্রেফতার করে, ক্রসফায়ারে দিয়ে সাময়িকভাবে হয়তো এই ভাইরাসকে দমিয়ে রাখা যাবে। সমূলে উৎপাটনের জন্য সামাজিক ঐক্যের বিকল্প নেই। এই ঐক্যের প্রক্রিয়াটি প্রাথমিকভাবে শুরু করেছেন মাওলানা মাসউদ, যা করার দরকার ছিল সরকারের, বিরোধী দলের, বাম দলগুলোর, লেখক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের, বুদ্ধিজীবীদের। কিন্তু আমরা তা করতে ব্যর্থ হয়েছি। মাওলানা মাসউদ পেরেছেন। তাকে অভিনন্দন জানাতেও আমাদের কুণ্ঠা!
মাওলানা মাসউদ, এই উদ্যোগের জন্য আপনাকে অভিনন্দন।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন