
রণজিৎ বিশ্বাস
: আপনি জায়গায় জায়গায় ও বহুজায়গায় বলেছেন ও লিখেছেন, শওকত ওসমান আপনার ভাবশিক্ষক স্কুলের একেবারে প্রারম্ভপঙক্তির মানুষ।
: শুধু প্রারম্ভপঙক্তির নয়, প্রারম্ভপঙক্তিরও প্রথমদিককার মানুষ।
: তার কাছ থেকে শেখা একটি বাক্য অন্তত বলুন। তারপর আজকের আজকের আসর শেষ করে যে যার দিকে চলে যাব।
: তিনি একটি আদর্শে বিশ্বাস করতেন এবং আরেকটিকে খুব ঘৃণা করতেন। আমাদের অনেকেরও তেমন আছে। ওই পথটায় আজ আমি উঠব না। আজ বলতে চাই, মানুষের ‘মানব’ হওয়ার পথে কী কী প্রতিবন্ধকতায় আমরা আটকে পড়ি।
বিষয়টা তিনি বড় সহজবোধ্যভাষায় বড় প্রতীকী বাক্যে কীভাবে বলেছিলেন, তা আমাদের জানা থাকতে পারে।
: আপনি কি ‘সেখের সম্বরা’ থেকে কিছু বলতে চাচ্ছেন?
: না। সেখান থেকে কিছু নয়। বলতে চাচ্ছি, অনুজপ্রতিম সাহিত্যশিল্পীকে লেখা তার এক উপহারলিপি থেকে। আমাদের একান্ত সুহৃদ ও কবিবন্ধু নাসির আহমেদকে তিনি একটি বই উপহার দিয়ে লিখেছিলেন মাত্র দু’টি চরণÑ‘মনে দু:খ বড় গো/মানুষ হওয়ার আগে/হিন্দু কিংবা মুসলিম হওয়া লাগে।’
: হঠাৎ এই কথাটিই কেন আপনার মনে পড়ল!
: হঠাৎ নয়, কথাটি সবসময়ই মনে পড়ে, কথাটি সবসময়ই মনে থাকে। দশদিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছেÑ মানুষকে মানুষকে মানবসন্তান হওয়ার জন্য মর্মতেজ ও মর্মলিপির এমন কথা কখনও ভোলা যাবে না। অন্তরের স্বরলিপিতে অনুক্ষণ গেঁথে রাখতে হবে। আর্জেন্ট। একেবারেই আর্জেন্ট। এই ছাঁচে ঢালাই করতে পারি আরও দু’টি ছবি। করব?
: করুন, দেখি সত্য কিনা।
: এক. আমাদের দেশে শিল্পী হওয়ার আগে/হিন্দু কিংবা মুসলিম হওয়া লাগে। দুই. কম্যুনিস্ট হওয়ার আগে/হিন্দু কিংবা মুসলিম হওয়া লাগে।
লেখক : কথাসাহিত্যিক, সাবেক সিনিয়র সচিব
স¤পাদনা : জব্বার হোসেন