লক্ষ্মীপুরে এখনও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের নামে স্কুল!
জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে রায়পুর উপজেলার রায়পুর-চাঁদপুর সড়কে পৌর শহরের পশ্চিম কেরোয়া গ্রামে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী এলএম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়টি এখনও পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খানের নামেই চলেছে।
১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে একজন শিক্ষক ও প্রায় ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে এটি। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ৩ একর ৮৬ শতাংশ জমিতে নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের নামেই লিয়াকত মেমোরিয়াল হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ওই থেকে এখনো লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বয়ে বেড়াচ্ছে বাঙালী বিদ্বেষী এই পাকিস্তানি নেতার নাম। দীর্ঘ এই পথচলায় বিদ্যাপীঠটি অসংখ্য গুণীজনের জন্ম দিলেও স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হলেও বিদ্যালয়টির মুকুটে জড়িয়ে আছে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও বাঙালি বিরোধী ওই পাকিস্তানি নেতার নাম আর স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হলেও নামটি পরিবর্তন করা হয়নি এখনও।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে স্থানীয় জমিদার মুন্সী মোহাম্মদ মনোহর মিয়ার স্ত্রী মোসাম্মৎ জেবুন্নেসা চৌধুরানী এ অঞ্চলের অধিবাসীদের নিরক্ষরতা দূর করার লক্ষ্যে নিজ বাড়িতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরে স্থানীয় সমাজসেবক ও বিদ্যোৎসাহী যুবকদের সহযোগিতায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে রায়পুর উপজেলা শহরের কাপড় পট্টিতে স্থানান্তর করা হয়। উক্ত স্থানে বিদ্যালয়ের জায়গাটি অপ্রতুল হওয়ায় ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে আবার স্থানান্তর করা হয় শহরের আলিয়া মাদ্রাসার সামনে উঁচু ভূমিতে দোচালা একটি টিনের ঘরে। এসময় বিদ্যালয়টি সর্বপ্রথম মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। পরবর্তীতে মৃত জেবুন্নেসা চৌধুরানীর একমাত্র ছেলে জমিদার এমদাদ আলী চৌধুরী বিদ্যালয়টিকে উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের রূপান্তরিত করার মনসে বর্তমান জায়গায় স্থানান্তর করেন।
১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের খুশি করার জন্য ইংরেজ রাজা ৫ম জর্জের নামানুসারে জমিদার বিদ্যালয়টির নামকরণ করেন জর্জ কর্নেশান হাইস্কুল। একই বছরে বিদ্যালয়টি সরকারি স্বীকৃতি ও মঞ্জুরি লাভ করে। জমিদার এমদাদ আলীর চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছেলে জমিদার গজনফর আলী চৌধুরী বিদ্যালয়টি পরিচালনা কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হলে তারই ইচ্ছায় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান কায়েমের পর বিদ্যালয়টির আগের নাম পরির্বতন করে পাকিস্কানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নামে লিয়াকত মেমোরিয়াল হাইস্কুল নামকরণ করা হয়। একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনের ৬ বছর পর ১৯৭৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পাকিস্কানিদের নাম রেখেই পাইলট বিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতি জেলায় একটি বিদ্যালয় মডেল করার লক্ষ্যে এই বিদ্যালয়টিকে ২০০৮ সালে মডেল ঘোষণা করা হয়।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুরের মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে এখনও তার নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে তা বাঙালি জাতির কাছে কাম্য হতে পারে না। অবিলম্বে এই নাম পাল্টানোর দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
উল্লেখ্য, প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালে ১০৫ বছর অতিক্রম করে আশপাশের এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটিতে ২২ জন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরতসহ ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৯শ’ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।